ঘুরে আসুন মন ভোলানো সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার

  • এম আরমান খান জয়, কক্সবাজার | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৫:১২ পিএম

কক্সবাজার : বছর ঘুরে ফের শীত আমাদের দুয়ারে। আসছে শীতকাল। জানাচ্ছে ভ্রমণের হাতছানি। শীতকাল হলো ঘুরে বেড়ানোর আদর্শ সময়। মানসিক প্রশান্তি এবং বিনোদনের জন্য মানুষ সারা বছরই ভ্রমণ করে বটে, কিন্তু শীতেই বেশিরভাগ মানুষ ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর একটা প্রধান কারণ হচ্ছে শীতের আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য বেশ উপযোগী। কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। তাই এই শীতে ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজার থেকে। কক্সবাজার যে শুধু বাংলাদেশের সবচাইতে বড় সমুদ্র সৈকত তা নয়, এটি পুরো পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, এর দৈর্ঘ্য ১২০ কি. মি.। পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। বালুকাবেলায় নোনাজলের ফেনিল ছাপ স্পষ্ট। সমুদ্রের গর্জন ধেয়ে আসে কিনারে। আছড়ে পড়ে ঢেউ।

শুধু তাই নয়, সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, দিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র, আকাশছোঁয়া পাহাড়, বৌদ্ধ মন্দির আর প্যাগোডা আরো নানান আকর্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এদেশের পর্যটন রাজধানী। ইংরেজ লেফটেন্যান্ট হিরাম কক্সের নামানুসারেই এর নাম হয় কক্সবাজার। এ জেলার বিভিন্ন অংশ জুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত আর ভ্রমণ স্থান। এ জায়গাগুলোতে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় এখনই অর্থাৎ শীত মৌসুম। কক্সবাজার ও এর আশপাশের বিভিন্ন মনোহরা ভ্রমণ কেন্দ্র নিয়ে কড়চার এবারের বেড়ানো।

সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ। সকালবেলা দিগন্তে জলরাশি ভেদ করে রক্তবর্ণের থালার মতো সূর্য। অস্তের সময় দিগন্তের চারিদিকে আরো বেশি স্বপ্নিল রঙ মেখে সে বিদায় জানায়। এসব সৌন্দর্যের পসরা নিয়েই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচনা করেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী বলা হয় এ জায়গাটিকে। সড়কপথে ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে চারশ’ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নয়নাভিরাম এ সমুদ্র সৈকত। এখানকার সমুদ্রের পানিতে গোসল, সূর্যাস্তের মনোহারা দৃশ্য দেখেও ভালো লাগবে। কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণের শুরুটা হতে পারে লাবনী পয়েন্ট থেকে। লাবনী বিচ ধরে হেঁটে হেঁটে পূর্ব দিকে সোজা চলে যাওয়া যায় হিমছড়িরর দিকে। যতোই সামনে এগুবেন ততোই সুন্দর এ সৈকত। সকাল বেলা বের হলে এ সৌন্দর্যের সঙ্গে বাড়তি পাওনা হবে নানান বয়সী জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, হিলটপ রেস্টহাউস ইত্যাদি কক্সবাজার ভ্রমণের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। কক্সবাজার শহরের জাদি পাহাড়ের ওপরে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির। শহরের যে কোনো জায়গা থেকেই রিকশায় আসা যায় এখানে। সান বাঁধানো সিঁড়ি ভেঙে জাদির পাহাড়ের ওপরে উঠলে সাদা রঙের এসব বৌদ্ধ প্যাগোডা দেখে ভালো লাগবে। এই পাহাড়ের ওপর থেকে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থান দেখতে পাওয়া যায়। শহরের আরেক জায়গায় রয়েছে অগমেধ্যা কেয়াং নামে আরেকটি বৌদ্ধ প্যাগোডা। কাঠের তৈরি প্রাচীন এ বৌদ্ধ মন্দিরটি দেখে আসতে ভুলবেন না। কক্সবাজারে থাকার জন্য এখন অনেক আধুনিক হোটেল মোটেল রয়েছে।

হিমছড়ি
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এক সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি। এখানকার সৈকতের চেয়ে ও আকর্ষণীয় হলো এর ভ্রমণ পথ। সৈকত লাগোয়া আকাশছোঁয়া পাহাড় এখানের অন্যতম আকর্ষণ। হিমছড়ির পাহাড়ের হিম শীতল ঝরনাও বেশ আকর্ষণীয়। কক্সবাজার সৈকত থেকে সবসময়ই খোলা জীপ ছাড়ে হিমছড়ির উদ্দেশে। জনপ্রতি ভাড়া ৭০-১০০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে লাগবে ১২০০-১৫০০ টাকা। এ ছাড়া রিকশা করেও যাওয়া যায় হিমছড়িতে। যাওয়া আসার ভাড়া লাগবে ২০০-২৫০ টাকা। আর ব্যাটারিচালিত রিকশায় গেলে যাওয়া আসার ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা।

ইনানী সমুদ্র সৈকত
হিমছড়ি ছাড়িয়ে প্রায় আট কিলোমিটার পুবে আরেক আকর্ষণীয় সৈকত ইনানী। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার ভেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। এখানে এলে মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে। রিজার্ভ জীপ নিলে লাগবে ১৮০০-২৫০০ টাকা। একটি জীপে ১০-১৫ জন অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়। দুই তিনজন হলে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়েও যেতে পারেন। সারাদিনের জন্য সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা।

মহেশখালী দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এ জায়গাটি মূলত বিখ্যাত এখানকার আদিনাথ মন্দিরের জন্য। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি ভেঙে আদিনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই পাওয়া যাবে বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। এ দ্বীপের দক্ষিণে রয়েছে বিস্তীর্ণ সাগর আর পশ্চিমে বিশাল বিশাল পাহাড়। এ ছাড়া এখানে আছে খুবই মনোরম একটি বৌদ্ধ মন্দির। মহেশখালীতে থাকার তেমন ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। তবে সেটা কোন সমস্যাই না। কেননা কক্সবাজার থেকে সকালে গিয়ে এ দ্বীপটি ভালো করে দেখে আবার বিকেলের মধ্যেই ফেরা সম্ভব। কক্সবাজার ট্রলার ঘাট থেকে মহেশখালী যেতে পারেন স্পিড বোট অথবা ইঞ্জিন বোটে। স্পিড বোটে লাগেবে ১৫ মিনিট আর ইঞ্জিন বোটে প্রায় ১ ঘণ্টা। ভাড়া যথাক্রমে ১৫০ ও ৩০০ টাকা।

সোনাদিয়া দ্বীপ
কক্সবাজারের বিপরীতে আরেকটি আকর্ষণীয় দ্বীপ সোনাদিয়া। শীতে প্রচুর অতিথি পাখির দেখা মেলে এখানে। প্রায় ৪৬৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটিতে কক্সবাজার থেকে গিয়ে আবার সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা সম্ভব। আর যেতে হবে ইঞ্জিন বোটে।

কুতুবদিয়া
কক্সবাজার জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান কুতুবদিয়া দ্বীপ। প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপে দর্শনীয় স্থান হলো প্রাচীন বাতিঘর, কালারমা মসজিদ এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার। কক্সবাজারের কস্তুরী ঘাট থেকে ইঞ্জিন বোট কিংবা স্পিড বোটে কুতুবদিয়া যাওয়া যায়। স্পিড বোটে সময় লাগে ৪৫ মিনিট আর ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা। আর ইঞ্জিন বোটে সময় লাগে ২ ঘণ্টার মতো আর ভাড়া ৫০-৭০ টাকা।
কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী একটি থানা রামু। এখানে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। এসবের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো লামারপাড়ার বৌদ্ধ কেয়াং, রামকোট হিন্দু মন্দির বৌদ্ধ কেয়াং। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে জিপে কিংবা মাইক্রোবাসে এখানে আসতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৪০-৫০ টাকা।

টেকনাফ
পাহাড়, নদী আর সমুদ্রের অনন্য এক মিলনস্থল বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূমি টেকনাফ। কক্সবাজার থেকে সড়কপথে এ জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। নাফ নদী বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে এখানেই পৃথক করেছে। পাহাড়ের ওপর থেকে নাফ নদীর অপরূপ সৌন্দর্য বিরল দৃশ্য। টেকনাফের সমুদ্র সৈকতটিও খুবই সুন্দর। বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন সৈকত বলা যায় এটিকে। এ ছাড়া এখানকার ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ, শাহ পরীর দ্বীপ, কুদুম গুহা, টেকনাফ নেচার পার্ক উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। কক্সবাজার থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে টেকনাফ আসা যায়। বাসে এখানকার ভাড়া ১০০-১২০ টাকা। আর মাইক্রোবাসে ১০০-১৫০ টাকা। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ছাড়ে আন্ত:জিলা বাস টার্মিনাল থেকে আর মাইক্রোবাসগুলো শহরের কলাতলী এবং টেকনাফ বাইপাস মোড় থেকে ছাড়ে। থাকার জন্য পর্যটন মোটেল নে টং ছাড়া এখানে আছে সাধারণ মানের কয়েকটি হোটেল। নে টং-এ প্রতিদিনের রুম ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা। আর অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ৩০০-৫০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।

কীভাবে যাবেন
সড়কপথে ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার আসা যায়। এ পথে এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, গ্রীনলাইন ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া ৬৫০-৮০০ টাকা। গ্রীন লাইন, সোহাগ, সৌদিয়া এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের এসি বাসে ভাড়া ১৫০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার ও জিএমজি এয়ারের বিমানে সরাসরি যেতে পারেন কক্সবাজার।

কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারে থাকার জন্য এখন প্রচুর হোটেল রয়েছে। ধরন অনুযায়ী এসব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ৩০০- ৫০০০ টাকা। সকলের সুবিধার জন্য নিচে কয়েকটি হোটেলের ফোন নম্বর দেয়া হলো। কক্সবাজারে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের রয়েছে হোটেল শৈবাল, ফোন-৬৩২৭৪। মোটেল উপল, ফোন-৬৪২৫৮। মোটেল প্রবাল, ফোন-৬৩২১১। মোটেল লাবনী, ফোন-৬৪৭০৩। পর্যটন করপোরেশনের ঢাকাস্থ হেড অফিস থেকেও এসব হোটেলের বুকিং দেয়া যায়। যোগাযোগ : ৮৩-৮৮, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। ফোন-৯৮৯৯২৮৮-৯১। এ ছাড়া অন্যান্য হোটেল হলো হোটেল সি গাল, (পাঁচ তারা), ফোন-৬২৪৮০-৯১, ঢাকা অফিস ৮৩২২৯৭৩-৬।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর