হলদেপেট ফুলঝুরি

  • আলম শাইন | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০১৮, ১২:৫৬ পিএম

ঢাকা : সুদর্শন চেহারা তাদের। পুরুষ পাখির রূপ নজরকাড়া। স্ত্রী দেখতে কিছুটা নিষ্প্রভ। দেখে মনে হতে পারে ভিন্ন প্রজাতির হয়তো বা। প্রাকৃতিক আবাসস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বন। পাইন বনেও এদের দেখা মেলে। উঁচু গাছে তেমন একটা দেখা যায় না। গ্রামীণ বনাঞ্চলে কমবেশি এরা বসবাস করে।

দেখা মেলে গেরস্তের সাজানো বাগানেও। অথবা বাড়ির আঙিনার লাউ-কুমড়া কিংবা ঝিঙেলতার ঝোপে এদের নাচানাচি করতে দেখা যায়। অর্থাৎ যেখানেই ফুল, সেখানে ফুলঝুরি পাখির সমাহার। ফুলের মধু এদের প্রধান খাবার।

মধুপানের নেশায় সারা দিন ব্যতিব্যস্ত সময় পার করে। গাছে গাছে ছুটে বেড়ায় ছোট ফল-ফলাদির সন্ধানেও। স্বভাবে ভারি চঞ্চল, অস্থিরমতি। কোথাও একদণ্ড বসে থাকে না। ছোট গাছ-গাছালি কিংবা লতাগুল্মের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে সুমধুর কণ্ঠে শিস কাটে। উত্তেজিত হলে কণ্ঠস্বর পাল্টে ‘জিট-জিট-জিট-জিট’ সুরে ডাকতে থাকে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে।

প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় বেশি দেখা যায়; হাঁকডাকও তখন বেড়ে যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। মাটির কাছাকাছি বাসা বাঁধে বিধায় বিড়াল বা বনবিড়ালের আক্রমণের শিকারে পরিণত হয় এরা। তার পরও বিশ্বে প্রজাতিটি ভালো অবস্থানে রয়েছে।

পাখিটির বাংলা নাম ‘হলদেপেট ফুলঝুরি’, ইংরেজি নাম ‘ইয়লো-বেলিড ফ্লাওয়ারপেকার’ (Yellow-bellied Flowerpecker), বৈজ্ঞানিক নাম Dicaeum melanoxanthum।

দৈর্ঘ্য কমবেশি ১১-১৩ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৫-৬ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষের মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ নীলচে কালো। ডানার গোড়ায় সাদাটান। গলার দুই পাশ কালো, মধ্যখানে সাদা লম্বাটান বুকের কাছে এসে ঠেকেছে। বুক কালো। পেট উজ্জ্বল হলুদ। চোখের মণি বাদামি। আর স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ ধূসরাভ-কালো। গলার কালো-সাদা তেমন উজ্জ্বল নয়। ঠোঁট কালচে। পা নীলচে কালো।
 
প্রধান খাবার : ফুলের মধু, ছোটফল। মাঝেমধ্যে পোকামাকড়ও খায়।

প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে এর হেরফের হয়। ভূমি থেকে দুই-আড়াই মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা গুল্মলতা আচ্ছাদিত ঝোপে ঝুলন্ত থলে আকৃতির বাসা বাঁধে এরা। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের নরম তন্তু, তুলা, শ্যাওলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন।

লেখক : আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ। alamshine@gmail.com

সোনালীনিউজ/এমটিআই