ঝালকাঠি: পান পাতা গ্রাম বাংলার অত্যন্ত পছন্দের একটি খবার। অনেকেরই খাওয়া শেষে একখানি পান না হলে চলেই না! পান পাতা যেমনি নরম তেমনি রসালো, এর যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকারিতাও। পান উৎপাদনে এখন বাংলাদেশ নিজের চাহিদা মিটে, কিছুটা রপ্তানিও করছে। বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চল খুলনা ও বরিশালে এর উৎপাদন বেশি হয়।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় পন চাষে চাষীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ হয়। দেশে অনেক আগে থেকেই পান চাষ হয়ে আসছে। অন্যান্যঅর্থকরী ফসল চাষের চেয়ে পান চাষ অনেক লাভজনক। অথচ এই খাতকে অবহেলা করা হয়েছে প্রথম থেকেই। সনাতন নিয়ম ছেড়ে আধুনিক জ্ঞানের আলোয় গবেষণাভিত্তিক পান চাষ করে ১ বিঘা জমি থেকে বছরে ২/৩ লক্ষ টাকা আয় হয়।
সারা বিশ্বে পানের জাতের সংখ্যা প্রায় ১০০টির মত। আমাদের দেশে ১০/১২ টি জাতের পান চাষ হয়ে থাকে। ভেষজ চিকিৎসায় পানের ব্যবহার হয় অনেকভাবে। পানে প্রধান ৭টি শিরা থাকে। এজন্য পানকে সপ্তশিরা বলেও অনেক অভিহিত করে। পান অত্যন্ত নরম ও রসালো বলে সহজেই জীবাণু আক্রান্ত হয়ে পচে যায়।
বছরে দুবার লতা নামানোর হিসেব অনুসারে একটি পানের লতা সাধারণত ১২/১৩ হাত লম্বা হয়ে থাকে। যা ২০ বছর পর ২৪০/২৫০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। সে হিসেবে ধারণা করা হয় পানলতাই পৃথিবীর দীর্ঘ উদ্ভিদ লতা।
কাঠালিয়ার পানচাষী হাবিবুর রহমান খান বলেন, দো-আঁশ মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী। অপেক্ষাকৃত উচু জমিতে পান চাষ করতে হয়। ১ বিঘা জমিতে ৫০/৬০ মণ জৈব সার ছিটিয়ে চাষ দিতে হয়। ৭ দিন পর ১ কেজি তুঁতে ও ৩ মণ পাথুরে চুন ফুটিয়ে গুড়া করে জমিতে ছিটিয়ে পানি সেচ দিতে হবে। তারপর মই দিয়ে সমতল করে ঘনঘন সেচ দিয়ে মাটি শক্ত করে নিতে হবে। সেচ দেবার সময় খেয়াল রাখতে হবে পানি যাতে জমির বাইরে চলে না যায়। এরপর বাঁশ, খুঁটি, চটা ইত্যাদি দিয়ে বরজ তৈরি করতে হয়। পান চাষ ছায়াযুক্ত স্থান লাগে।
পান চাষী জালাল পাহলান বলেন, পানের ফলন ভালো পেতে হলে উন্নতমানের উপকরণ দিয়ে বরজ তৈরি, প্রতিদিন বরজ দেখাশোনা, ভাল জাতের রোগমুক্ত লতা লাগানো, চারা গাছের যত্ন, লতা উঠলে শক্ত কাঠি ব্যবহার করা, ডগা ঝুলে পড়তে না দেয়া, বরজের ছাউনি নিবিড় ঘন না করা, উপরের গাছের ডালপালা ছেটে দেয়া, লতা নামানোর সময় যাতে ঝাকি নালাগে সেদিকে খেয়াল রাখা বা পাতা তোলা, বয়সী পান না রেখে দ্রুত বাজারজাত করা। তাহলে পানের বরজ থেকে অধিক পরিমান লাভ করা সম্ভব।
কাঁঠালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পান চাষে জৈব সার ব্যবহার ও তাপমাত্রা নির্ধারণ করা, ‘জো’ মতো সেচ দেয়া, এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৪০ থেকে ৫০ ইঞ্চি হওয়া, লোনা মাটি পরীক্ষা করে চুন প্রয়োগ করা, লতার সাথে শাখা ডাল না রাখা, পোকামাকড় ও রোগব্যাধি সনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া, রোগা পাতা বা লতা না রাখা, তিনহাত খোপে দু’কাতারে ১৪ থেকে ১৬টির বেশি লতা না রাখা, বৃষ্টির সময় জমিতে কাদাপানি জমে থাকলে লতা মাটিতে ফেলে না রাখা, লতা থেকে শাখা ভেঙে দেয়া ইত্যাদির দিকে লক্ষ্য করলে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই