পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পেশা ছাড়বেন পাটিকর’রা

  • মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৪, ২০১৮, ১১:৪৮ এএম

ঝালকাঠি: জেলার রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি ও সাংগর গ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের পাটি গ্রাম হিসাবে পরিচিত। তীব্র গরমে হিমেল পরশের জন্য শীতল পাটির জুড়ি নেই।

আর এই পাটি তৈরি করে দেশ বিদেশের নানা জায়গায় সরবরাহ করছেন পাটি কারিগররা। তাই গ্রাম দুটির অধিকাংশ ঘরেই চলছে এখন পাটি তৈরির কাজ। গরমে ক্লান্তির ছোয়া লাগলেও পাটি তৈরির এ মৌসুমে পাটিকরদের কাজে নেই কোনো ক্লান্তি। গ্রাম দুটির বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, গৃহবধূ, ছাত্র-ছাত্রীরাও ব্যস্ত এ নিপুন এই কারুকাজে। দিন রাত রং বেরংয়ের পাটি তৈরি হচ্ছে এখানে।

ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার শীতল পাটির কদর বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় পাটিকররা অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। চাহিদার তুলনায় তারা পর্যাপ্ত পাটি সরবরাহ করতে পারছেন না। রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি ও সাংগর গ্রামে ১২ মাসই পাটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এরা।

এ দুই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় দেড়শ পরিবারের ছয় শতাধিক লোক এই পেশায় সাথে জড়িত। পাইতরার বেতি দিয়ে বাড়িতে পাটি তৈরির আসল কাজটি করেন নারীরাই। তবে মাঝে মধ্যে পুরুষরাও নারীদের সাথে এ কাজে হাত লাগায়। একটি পাটি তৈরি করতে সময় লাগে ৪-৫ দিন। যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় পাটি তৈরি করে আসছেন তারা।

গ্রাম দুটির প্রবেশ পথে চোখে পড়ার মত দেখা যায় পাইতরা বন। গ্রাম দুটির প্রায় একশ একর জমিতে পাইতরা চাষ হয়। শীতল পাটির কদর ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। কিন্তু পাটিকরদের পুনবার্সন এবং পাটি বিক্রির মৌসুমে বিনা সুদে ঋনের ব্যবস্থা নেই। যদি বিনা সুদে অথবা সল্প সুদে ব্যাংক লোন পায় পাটিকররা তবে এ শিল্পটি দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।

গ্রাম দুটিতে মৌসুম ছাড়াও বছরে প্রায় ২০ হাজার পাটি তৈরি হয়। এগুলো বিক্রি করে দাম পাওয়া যায় অর্ধ কোটি টাকা। এখানকার তৈরি শীতল পাটি দেশের চাহিদা পুরন করে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। ইতিমধ্যে দেশ বিদেশে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে এ অঞ্চলের শীতলপাটি। যারা পাটি তৈরি করে স্থানীয় ভাষায় তাদের পাটিকর বলা হয়। পাটি তৈরিই ওখানকার মানুষের প্রধান পেশা।

স্থানীয় শীতল পাটি উন্নয়ন প্রকল্প সমিতির সভাপতি তাপস পাটিকর জানান, শীতল পাটি যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছি। এখন বর্তমান পরিস্থিতি এমন অবস্থা হয়েছে এই শীতল পাটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। কারণ যে কষ্ট ও পরিশ্রম করি আমরা সেই মূল্য শীতল পাটিতে পাই না। বিভিন্ন রকম আবেদন করেছি সরকারের কাছে। কিন্তু সরকার থেকে কোন সহযোগিতা পাইনাই। তাই আর বেশি দিন এই পেশা ধরে রাখতে পারবো না, এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হব।

ভবতাজ পাটিকারিগর জানান, আগে গরম এলেই শীতল পাটির চাহিদা অনেক বেশি ছিল। এখন আর আগের মতো নেই। কারণ বর্তমান যুগের প্লাস্টিকের তৈরি পাটি বাজার দখল করে রেখেছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, ঝালকাঠির শীতল পাটি দেশজুড়ে বিখ্যাত। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের আয়োজনে ৪০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা শীতল পাটি দিয়ে বিভিন্ন রকম খেলনা, ম্যাট ও কলমদানি সহ এ রকম অনেক জিনিস তৈরি করেছে। এখন এগুলো মাকেটিং এর কাজে চলছে। এদের উন্নয়নের জন্য ওদের বসার জায়গা ও রাস্তা ঘাটের অসুবিধা ছিল তা আমরা ঠিক করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন