বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

  • মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, নাটোর | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০১৮, ১১:৫০ এএম

নাটোর: জেলার সিংড়ার চলনবিলাঞ্চলে আধুনিকতার স্পর্শ আর কালের বিবর্তণে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। আজ যেই জিনিসটি পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করছে, কাল তার স্থান হচ্ছে ইতিহাসে অথবা যাদুঘরে। ধ্বংস আর সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ মানুষের রুচি বোধের পরিবর্তন।

কালের আবতর্নে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে মাটি দিয়ে তৈরি ঘর। খুব সহজেই তৈরি করা যেতো এই ঘর। তার জন্য প্রয়োজন হতো এঁটেল বা এঁটেল দো-আঁশ মাটি। ঘর তৈরী করার জন্য তেমন কোন খরচ হতো না। কৃষাণ-কৃষাণী ও তাদের ছেলে-মেয়েরা মিলে অল্প কয়েক দিনেই এ ঘর তৈরি করা যেতো।

যে মাটি দিয়ে ঘর তৈরি করা হতো সেই মাটিতে কোঁদাল দিয়ে ভালো করে কুপিয়ে ঝুর-ঝুরে করে নেয়া হতো। তারপর তার সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে থকথকে কাঁদা করে নেয়া হতো। অতঃপর সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো মাটির ঘর।

অল্প-অল্প করে মাটি বসিয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার পূর্ণাঙ্গ ঘর তৈরি করতে সময় লাগতো মাত্র মাস খানেক। ঘর তৈরি সম্পূর্ণ হলে তার উপর ছাউনি হিসেবে ব্যবহার হতো ধানের খড়। খড় দিয়ে এমনভাবে ছাউনি দেয়া হতো যেন ঝড়-বৃষ্টি কোনো আঘাতই তেমন একটা ক্ষতি করতে পারতো না।

তবে বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। অনেক সময় মাটির ঘর দোতলা পর্যন্ত করা হয়। অত্যন্ত আরামদায়ক মাটির আবাস দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও একসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। এখন মাটির ঘর ভেঙ্গে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটের তৈরি পাকা দালান।  মাটির ঘরগুলো গরমে শীতল আর শীতের উষ্ণ।  বর্তমানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মতো।

সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম যেমনঃ কলম, বামিহাল, জামতলী, চৌগ্রাম, বিলদহর, শেরকোল, খেজুরতলা, বন্দর, সাতপুকুরিয়া, ডাহিয়া, আয়েশ-বিয়াশ, সুকাশ, পৌর শহরের দমদমা, চকসিংড়া, শোলাকুড়া, সোহাগবাড়ি, কতুয়াবাড়ি, মহেশচন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একসময় প্রচুর পরিমাণে মাটির ঘর দেখা গেছে। এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে।

পৌর শহরের চকসিংড়া মহল্লার সবুজ আহমেদ বাবু জানান, এই বাড়ী তাদের পূর্ব-পুরুষদের আমলে তৈরি। যে আমলে এই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে তখনকার সময়ে এই রকম দোতালা মাটির বাড়ি জমিদারির একটি নমুনা ছিল। যার প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক থাকতো তারাই মাটির দো’তালা বাড়ি বানাতো।

বিলহালতি ত্রিমোহনী অনার্স কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বেলাল-উজ-জামান জানান, সিংড়া উপজেলায় একসময় প্রায় বাড়ীতেই মাটির ঘর ছিল। তখনকার সময়ে ধনী-গরিব কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাছাড়া মাটির ঘরে আলাদা স্বস্তী ছিল। বর্তমানে মানুষের আধুনিক জীবন যাপনের ইচ্ছা ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া মাটির বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে ইটের বাড়ী-ঘর তৈরীতে ঝুকে পড়েছেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন