টার্কি পালনে স্বাবলম্বী কুদ্দুস আলম

  • আল-মামুন আরজু, রাজবাড়ী | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০১৮, ১১:২২ এএম

রাজবাড়ী: একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সকলেই চিনতো রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার কুদ্দুস আলমকে। সাংবাদিকতায় বেশ নাম ছিল তার। এখন তাকে সবাই চিনে টার্কি কুদ্দুস হিসেবে। রাজবাড়ীর গন্ডি পেরিয়ে তার টার্কি মুরগি রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই টার্কি মুরগি পালনে সফলতা এনেছেন তিনি।

কুদ্দুস আলম যে প্রতিষ্ঠানের সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করতেন গত বছরের মার্চ মাসে সেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হতাশায় দিন পার করছিলেন তিনি। কি করবেন ? কিভাবে সংসার চালাবেন ? এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছিলেন তিনি।

কুদ্দুস আলমের সফলতা বিষয়ে কথা হয় তার সাথে তিনি জানান, বড় ছেলে রাজবাড়ী সরকারী কলেজে পড়া শোনা করে পাশাপাশি কম্পিউটারের উপর বেশ দক্ষতা রয়েছে তার। বাবার হতাশা আর দুশ্চিন্তা দেখে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করতে করতে সন্ধান পান টার্কি মুরগি পালনের।

ছেলের পরামর্শ পেয়ে গত বছরের আগষ্ট মাসে মাত্র ৬০ টি টার্কি মুরগি, মুরগি পালনের ঘর মেরামতসহ দেড় লক্ষ টাকার মুনাফা নিয়ে শুরু। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রথম তিন মাসেই লাভের মুখ দেখেন তিনি।

খামারের বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্তমানে তার খামারে বাচ্চা টার্কি মুরগির সংখ্যা রয়েছে ৩০০ টি। যার প্রতি জোরা ( ২ টি এক জোরা ) বিক্রি হবে ৫০০ টাকা দরে। বড় টার্কি রয়েছে ৫০৬ টি যার প্রতিটির ওজন ৮ থেকে ৯ কেজি করে। মাঝারি ধরনের টার্কি আছে ২০৫ টি।

সব মিলিয়ে এক হাজারের উপরে টার্কি মুরগি রয়েছে তার। এর মধ্যে প্রতিদিন ৬০ টি মুরগি ডিম দিচ্ছে। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। বর্তমানে তিনি টার্কি মুরগির মাংস বিক্রি করছেন সাড়ে ৪ শত টাকা কেজি দরে।

এছারাও তার মুরগি পালনে দুটি বড় শেড (ঘন) বাচ্চা পালনে একটি ছোট শেড রয়েছে। সব মিলিয়ে তার এখন মূলধন দারিয়ে ১০ লক্ষ টাকার উপরে।

কুদ্দুস আলমের মাসিক আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন প্রতিমাসে কম করে হলেও এক লক্ষ টাকার টার্কি মুরগি বিক্রি করেন তিনি। এর থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা মাসে লাভ হয়। বর্ষা মৌসুম হওয়াতে লাভ একটু কম হচ্ছে কারন এখন মুরগির খাদ্য ঘাস সংকট যে কারনে খাওয়াতে হচ্ছে ফিড খাবার। প্রতি ( ৫০ কেজি ) বস্তা ফিড কিনতে হচ্ছে ২৩ শত টাকা হিসেবে।

টার্কি মুরগির বাচ্চা কোথায় বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার খামারের পাশেই রয়েছে গোয়ালন্দ হ্যাচারি সেখান থেকে বাচ্চা ফুটানোর পর খামারেই রেখে দেই, সেই বাচ্চা, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলার খামারীরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কিনে নিয়ে যায়।

কুদ্দুস আলমের সফলতার পিছনে কার সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরনা বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন- তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারের কথা।
কথা হয় নাসিমা আক্তারের সাথে যিনি কিনা সব সময় টার্কির খামার দেখা শোনা করেন। টার্কি পালন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি জরুরী হলো টার্কি মুরগির খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও ভ্যাকসিন প্রদান করা। সময় মত ভ্যাকনিন প্রদান করলে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে লোকসানের কোন কারন নেই।

টার্কি মুরগির খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ জাতীয় মুরগি বেশি পছন্দ করে ঘাস ও সবজি। বেশি খেয়ে থাকে পাতা কপি ও লাউ। প্রতিদিন মাঠ থেকে ঘাস সংগ্রহ করে খাওয়ানো হয় টার্কি গুলোকে। তাছারা টার্কি মুরগিকে খাওয়ানোর জন্য খামারের পাশে বপন করা হয়েছে নেপিয়ার জাতীয় ঘাস।

টার্কি খামারী নাসির মাহমুদ ইভান জানান, এক সময় খুব কষ্টে কেটেছে আমাদের সংসার। বর্তমানে ভালো ভাবে কাটছে দিন। পড়াশোনার পাশাপাশি টার্কি মুরগির দেখাশোনা করি বাবাকে একটু সহযোগিতা করি।

কুদ্দুস আলমের কাছে জানতে চাওয়া ছিল টার্কি পালনে আর কি পদ্ধতি অবলম্বল করলে আরো বেমি লাভবান হওয়া যাবে। এ বিষয়ে তিনি জানান, সবাই বলে কম সুদে লোনের কথা আমি তার উল্টো বলবো কারন লোনের কোন দরকার নেই সবচেয়ে বেশি দরকার বাজার তৈরি করা। সরকার যদি টার্কি মুরগির বাজার তৈরি করে দেয় তবে বাংলাদেশের অনেক বেকার যুবক সফলতা নিয়ে আসতে পারবে।  

কুদ্দুস আলমের সফলতা দেখে জেলায় দিন দিন বাড়ছে টার্কি মুরিগ পালন। এরই মধ্যে জেলার অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলেছেন টার্কি মুরগির খামার।

রাজবাড়ী জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান, টার্কি পালন এখন একটি লাভজনক ব্যবসা। গোয়ালন্দ উপজেলার দেওয়ানপারা এলাকার আজগর আলী মন্ডলের ছেলে কুদ্দুস আলম একজন সফল টার্কি খামারী, আমি তার খামারটি পরিদর্শন করেছি।

এছারাও রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা থেকে টার্কি পালন বিষয়ে জানতে খামারীরা আসছে। যারা আগে থেকে শুরু করেছে তারা এখন খুব খুশি। টার্কি মুরগি পালনে জেলা প্রানি সম্পদ কার্যালয় থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন