অশ্লীলতা ও নিরাপত্তাহীনতায় সাতছড়িতে কমেছে পর্যটক

  • কাজল সরকার, হবিগঞ্জ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০১৮, ০৫:৫৮ পিএম

হবিগঞ্জ : ঈদের ছুটিতে হবিগঞ্জের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠলেও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছিল না চোখে পড়ার মতো কোনো দর্শনার্থী। উদ্যানের ভেতরে যুবক-যুবতীতের প্রকাশ্য অশ্লীলতা, নিরাপত্তাহীনতা আর অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে এখন থেকে দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা। সেই সঙ্গে উদ্যানের ভেতর থেকে গত ৩ মাসে ৪টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেক দর্শনার্থী। তবে পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন উদ্যানের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়নসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করলে পুনরায় এখানে দর্শনার্থী ফেরানো যাবে।

জানা যায়, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি এ উদ্যানে রয়েছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণি। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ ‘সাতছডি জাতীয় উদ্যান’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পর থেকেই এখানে বিভিন্ন দিবসসহ সব সময় দর্শনার্থীদের পদচারণা মুখরিত হয়ে উঠে উদ্যানটি। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা, যুবক-যুবতীতের প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ও অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে দিন দিন কমতে শুরু করেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। গত ১০ বছরের একটি ওয়াচ টাওয়ার ও একটি ট্রি এনডভেঞ্জার ব্যতিত আর কোনো অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি উদ্যানটিতে। সেই সঙ্গে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার কারণে নষ্ট হচ্ছে উদ্যানের পরিবেশ।

এদিকে, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় এর ভেতরেই যুবক-যুবতীদের রাশলীলা চলার কারণে পরিবারের নারীদের নিয়ে সাতছড়িতে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন দর্শনাথীরা। সেই সঙ্গে গত ৪ মাসে উদ্যানের ভেতর থেকে ৩টি নারীর লাশ উদ্ধার করার কারণে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পর্যটকরা।

এ ব্যাপারে উদ্যানে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী মো. ইসমাঈল মিয়া বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসতাম। কিন্তু বর্তমানে এটির অবস্থা খুব নাজুক। উদ্যানের ভেতরে ঘুরতে গেলে বিভিন্ন অশ্লীল দৃশ্য চোখে পড়ে। যার কারণে এখন আর নারী-শিশুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসার পরিবেশ নেই।’

স্কুল শিক্ষিকা মনিরা বেগম বলেন, ‘ জায়গাটির নাম অনেকবার শুনেছি। তাই এবার ঈদে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসলাম। কিন্তু এখানের অবস্থা খুবই নাজুক। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব। এখানের পরিবশে যেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। তাহলে আমরা যারা দর্শনার্থী আছি তাদের ঘুরতে অনেক ভালো লাগবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা রুকন মিয়া বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন এখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসত। আর দুটি ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে এখানে দর্শনার্থীর ভিড়ে হাটা যেত না। কিন্তু এখন আর এখানে দর্শনার্থী আগের মতো আসেন না। কারণ এখানে পরিবেশ আগের মতো নেই। নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য থাকার সুবিধা। এমন কি পানি খাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত এখানে নেই।’

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে উদ্যানের ভেতরে বাড়ছে অপরাধ ও অশ্লীলতা। গত কয়েক মাছে এখান থেকে ৪টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর জন্য দায়ি কর্তৃপক্ষ। তবে স্টাফ সংকট ও সরকারি অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে পারছেন না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

বন বিট কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান বলেন, এখানে স্টাফ সংকট রয়েছে। যার কারণে এখানের পরিবেশ একটু ময়লা আবর্জনাময়। তবে নিরাপত্তা কর্মী না থাকার কারণে আমরা দর্শনার্থীদের গভীর জঙ্গলে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি।’ তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের খাবার ব্যবস্থা তো আর আমাদের করার কথা নয়। তবে খাবার পানির জন্য একটি পাম্প বসানো হচ্ছে।  ইতোমধ্যেই এর কাজ শুরু হয়ে গেছে’।

লাশ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লাশগুলো গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন টিপরারা বসবাস করেন। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নাই। উদ্যানের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে আবারও এখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে দাবি বিনোদন প্রেমিদের।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর