আরো বেশি হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

‘রাতযাপনে শেষ সুযোগ নিতে’ সেন্টমার্টিনে পর্যটকের ঢল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৮, ০৯:০৫ পিএম

ঢাকা : সরকারি সিদ্ধান্তে আগামী মার্চ থেকে সেন্টমার্টিনে নিষিদ্ধ হচ্ছে পর্যটকদের রাত্রিযাপন। দ্বীপটিতে প্রবেশ করতেও সম্পন্ন করতে হবে বিভিন্ন প্রক্রিয়া। তাই জীবনে শেষবারের মতো দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতা নিতে চাইছেন সামর্থ্যবানরা।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসফরের স্থান নির্বাচনেও প্রাধান্য পাচ্ছে দ্বীপটি। সব মিলিয়ে সেন্টমার্টিনে এখন পর্যটকের ঢল নেমেছে। আর এর ফলে আরো বেশি হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য।

রাজধানী ঢাকার আশকোনা এলাকার ৬৫ বছর বয়সী মোমেনা বেগম। একমাত্র ছেলে, পুত্রবধূ ও দুই বছর বয়সী নাতিকে নিয়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা নিতে তিনিও যান সেন্টমার্টিনে। ঢাকা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বাস পেলেও মেলেনি জাহাজের টিকেট। পুরো পরিবারের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেপে বসেছেন সেন্টমার্টিনগামী ট্রলারে। একটি হোটেলে বুকিং থাকলেও তা বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি হোটেল ঘুরে অবশেষে তিনি ঠাঁই পেয়েছেন ঝুপড়ির মতো একটি রিসোর্টে। পর্যটকের বাড়তি চাপে মোমেনা বেগমের মতো অনেকেই বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেখানে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বর্তমানে চারটি জাহাজ চলাচল করছে। কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন ও বে-ক্রুজ ও গ্রিনলাইন নামের চার জাহাজের ধারণ ক্ষমতা প্রায় দেড় হাজার। চারটি জাহাজে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছেন আরো প্রায় হাজারখানেক পর্যটক। আর জীবন বাজি রেখে ট্রলারে পাড়ি দিচ্ছেন আরো কয়েক শ মানুষ। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ যাচ্ছেন সেন্টমার্টিনে।

কয়েকটি জাহাজে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। দেড়শ টাকার ট্রলার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেটও সরবরাহ করছে না অনেক ট্রলার কর্তৃপক্ষ। হোটেলে বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি রেস্টুরেন্টগুলোতেও হাঁকা হচ্ছে খাবারের বাড়তি দাম।

সেন্টমার্টিনে সবচেয়ে বড় হোটেল ব্লু মেরিনে কক্ষ রয়েছে ৪০টি। হোটেলটির মালিক জাফর আহমেদ গত রোববার জানান, তার রিসোর্টে কোনো কক্ষ আপাতত খালি নেই। একই তথ্য জানিয়েছেন ৩২ কক্ষের হোটেল অবকাশের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান। এ মাসেই নতুন চালু হওয়া ফ্যান্টাসি হোটেলের সব কক্ষও আগাম ভাড়া হয়ে গেছে।

একই তথ্য জানিয়েছেন মারমেইড রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রাহাত হোসেন, সানসেট ভিউ রিসোর্টের জুনায়েদ উদ্দিন রানা, সাগর বিলাসের জোবায়ের ও স্বপ্ন প্রবালের মফিজ আলম।

জাফর আহমেদ জানান, সেন্টমার্টিনে বড় আকারের আবাসিক হোটেল আছে প্রায় একশ। এর বাইরে স্থানীয়দের অনেকেই নিজেদের বসতবাড়িকে রিসোর্টে রূপ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে সেখানে। ভরা মৌসুমে সব হোটেলেই পর্যাপ্ত পর্যটক রয়েছে বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্টমার্টিনে স্থায়ীভাবে বাস করেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। এর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক পর্যটক যোগ হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের চাপে পড়ছে দ্বীপটি। পর্যটকদের খাবার চাহিদা মেটাতে নিয়ম ভেঙে উপকূল এলাকায় মাছ শিকারে ব্যবহার হচ্ছে কারেন্ট জাল। ফলে উঠে আসছে জেলিফিশ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, ঝিনুক ও শামুক। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দ্বিপটির জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ভিজিটিং লেকচারার সমুদ্রবিজ্ঞানী হাসিবুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সেন্টমার্টিন। রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই