জামালপুরে হিমাগার স্থাপনের দাবি

ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা

  • জামালপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০১৯, ১২:০৭ পিএম

জামালপুর : জামালপুরের টমেটোর বাজার নান্দিনা। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত বাজার। ভোরে ক্ষেত থেকে ছোট ছোট ভ্যানগাড়িতে বাজারে আসতে থাকে টমেটো। টমেটো নামানো, বাছাই, বাক্সভর্তি ও ট্রাকে উঠানোয় শ্রমিকদের দম ফেলানোর ফুসরত নেই। এখান থেকে প্রতিদিন অর্ধ শতাধিকের উপরে ট্রাক ভর্তি টমেটো যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। হাইড্রোজ ও ফরমালিন মুক্ত এখানকার উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

মৌসুমের শুরুর দিকে ১২শ থেকে ১৮শ টাকা মণ টমেটো বিক্রি হলেও বর্তমানে সাড়ে ৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে টমেটোর দাম মন প্রতি ১শ থেকে ৮০ টাকায় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষীরা। মানে প্রতি কেজি ২ টাকায় নেমে আসবে। আর সংরক্ষণের অভাবে টমেটো চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এ অঞ্চলে টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছে টমেটো চাষী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় টমেটো চাষী ও কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জামালপুরের সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বেশকয়েকটি ইউনিয়নে চরে টমেটো আবাদ করছেন চাষিরা। বেলেদোআঁশ মাটিতে টমেটো চাষের জন্য উর্বর। এবার সদর উপজেলায় ১৩শ হেক্টর জমিতে সফল, বিউটিফুল, উদয়ন ও উন্নয়ন জাতের টমেটোর আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ১শ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়। প্রতিবিঘায় উৎপাদন হয় প্রায় দেড়শ মন টমেটো । বিঘাতে খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা।

সদর উপজেলার লক্ষীরচর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের টমেটো চাষী শেখ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া (৪৫) বলেন, দেড় বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। বিঘায় দেড়’শ মন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। পলিথিন দিয়ে বিজতলার সেড তৈরি, বীজ রোপন, জমি তৈরি, ভিটি তৈরি, চারা রোপন, প্রতি চারার সঙ্গে বাঁশের খুঁটি লাগানো, নিড়ানি, প্রতি সপ্তাহ পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ও পরিবহণে ব্যয় সব মিলে যা খরচ হয়। আর টমেটোর দর কম হওয়ায় সেই খরচই উঠছে না।

চর যথার্থপুরের ভাটি পাড়ার টমেটো চাষী লাল মিয়া আকন্দ (৪০) বলেন, বর্তমানে ৪শ থেকে ৫০ টাকা মন দরে টমেটো বিক্রি করছি। সপ্তাহ খানিকের মধ্যে দাম নেমে যাবে। আর ২ টাকা কেজি টমেটো বিক্রি হলে কামলা খরচ ও পরিবহন খরচ মিটিয়ে পকেটে আর কিছু থাকবে না। তখন ক্ষেতের টমেটো ক্ষেতেই পচে নষ্ট হবে।

তুলশির চরের টমেটো চাষী আব্দুল মোতালেব (৫৫) বলেন, টমেটোর ফলন ভালো হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লাভের মুখ দেখছি না। ১শ মন টমেটো বাজারে এনেছি। পাইকাররা যা দাম ধরবে তাই দিয়ে বিক্রি করতে হবে। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন হলে সেখানে রেখে সঠিক মূল্যে টমেটো বিক্রি করতে পারতাম। আমদানি বেশি ক্রেতা কম থাকায় পানির দরে টমেটো বিক্রি করছি।

ঢাকার কাওরান বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী হামেদ আলী (৪৫) বলেন, এ বাজার থেকে সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা মন কিনে ঢাকায় ৭শ থেকে ৮শ টাকা দরে টমেটো বিক্রি করি। এর মধ্যে পরিবহন খরচ ছাড়াও রোডে পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা গুনতে হয়।

আড়ৎদার আনছার আলী বলেন, ফলন ভাল হওয়ায় ব্যবসা ভাল। তবে প্রতি ক্যারেট(বাক্স) ৩টাকা হিসেবে প্রতি ট্রাকে ৭ হাজার টাকা খাজনা গুণতে হয়। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ তুলেন বাজার ইজারাদারের বিরুদ্ধে।

অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর এই রেটেই খাজনা আদায় হয়। বাজার ইজারা ও নিয়ন্ত্রণসহ নানা খাতে খরচ হয়। খুব একটা যে আমাদের থাকে তাও না।

জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাখাওয়াত ইকরাম বলেন, এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষীরা লোকসানের কথা যেভাবে বলছে, আসলে লোকসান হওয়ার কথা নয়। টমেটো সংরক্ষণ করা গেলে তাদের লাভ আরো বেশি হতো।

সদর উপজেলায় সবজি হিমাগার স্থাপনে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। হিমাগার স্থাপন হলে টমেটো সংরক্ষণ করে পরে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারতেন চাষীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই