চীনে ব্যতিক্রমধর্মী মাংস উৎসব

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০১৬, ০৪:৪৪ পিএম

সোনালীনিউজ ডেস্ক

পৃথিবীর নানান দেশে চিত্র-বিচিত্র যত উৎসব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। দেশভেদে এই উৎসবগুলোর মধ্যেও লক্ষ করা যায় বৈচিত্র্যময়তা। যেমন চীনের মাংস  উৎসবেরই কথাই ধরা যাক। প্রতিবছর জুনের মাঝামাঝি আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমধর্মী এই উৎসব। দক্ষিণ চীনের ইয়ুলিনে প্রতিবছর এই উৎসব পালন করে আসছে চীনারা। তবে এই মাংস উৎসবের আছে আবার কিছু বিশেষত্ব।

এই উৎসবে আয়োজকরা সবধরনের পোষা প্রাণী থেকে শুরু করে বন্য প্রানীর জবাই করে। এমনকি এই প্রাণীদের তালিকা থেকে বাদ পড়ছেনা কুকুর ও বিড়াল। সপ্তাহ জুড়ে চলতে থাকা এই মাংস উৎসবে কয়েকদিনের মধ্যে দশ হাজার কুকুর এবং বিড়াল জবাই করা হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে পশু অধিকার সংগঠনগুলো বলছে কুকুর বিড়ালের এমন জবাই শুধু জুন মাসে উৎসবটি চলাকালীন সময়েই হয়। উৎসব শেষ হয়ে গেলে এমনটি আর কখনো করা হয় না।

তবে সম্প্রতি এই বিষয় নিয়ে একটি তথ্য প্রকাশিত হলে সেখানে বলা হয়, উৎসবকে কেন্দ্র করে এমন হত্যা শুধু জুন মাস নয় সারা বছর জুড়েই চলে। আর এটা ইয়ুলিনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ইয়ুলিনে প্রতিদিন ৩০০’শর মতো কুকুর বিড়াল জবাই দেয়া হয়। আর এগুলোর বেশ পোক্ত প্রমাণও পাওয়া গেছে। অনেকেই আবার অভিযোগ করেন, তাদের শখ করে পোষ্য কুকুরটিকেও চুরি করে জবাইয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

পশু অধিকার সংস্থার একটি দল ঘটনা স্বচক্ষে যাচাইয়ের জন্য ইয়ুলিনের মাংস উৎসবে যান। সেখানে গিয়ে তারা রীতিমতো হতভম্ব। তারা দেখতে পান, প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার কুকুর, বিড়াল আনা হচ্ছে জবাইয়ের জন্য। চীনের একজন নীতি বিশেষজ্ঞ ডক্টর লি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেলে তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পান মাত্র তিনটি কুকুর এবং বিড়াল জবাই দেয়া হচ্ছে। যেখানে আশেপাশের লোকজন বলছেন প্রতিদিন ৩০০’শ টি কুকুর বিড়াল জবাই দেয়ার কথা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কুকুর বিড়ালগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে কসাইখানায় আনা হয় এরপর লোহার রড দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়। এদের মধ্যে অনেকের গলায় শিকলের চেইন লাগানো থাকে। যাদের দেখলেই বোঝা যায় এই প্রাণীগুলো কারো পোষা ছিল এবং তাকে চুরি করে আনা হয়েছে। অসহায় কুকুর বিড়ালগুলো জবাই করার পর তাদের একটি দণ্ডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাদের রক্তে সারা মেঝে ভেসে যায়।

‘এটা সত্যিই একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি যা এর আগে আমি কোনদিন দেখিনি।’ এমনটিই বলছিলেন ডক্টর লি। তিনি আরো বলেন, ‘কুকুর বিড়ালগুলো খাঁচার ভিতর ভীতসন্তস্ত্র হয়ে দাড়িয়েছিল। তাদের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। এটা সত্যিই কষ্টকর নিজের চোখের সমানে নিজেদের সজাতিকে একের পর এক হত্যা হতে দেখা।’

লি’র মতে এত কুকুর বিড়াল জবাই দেয়া হয় এর পিছনে নিশ্চয়ই বড় কোন কারণ জড়িত। তাই তিনি তার ভ্রমনকালে এর কারণ খুঁজে বের করার জন্য চীনের কিছু নামকরা রেস্তরায় যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, কুকুর বিড়ালের মাংস চীনের রেস্তোরাগুলোতে বেশ জনপ্রিয়। রেস্তোরাগুলোতে মাংসের চাহিদা মেটাতে এখানে নিয়মিত কুকুর বিড়ালের মাংস দিয়ে যাওয়া হয়। একজন রেস্তেরা মালিক জানান, ‘আমার যখন মাংসের প্রয়োজন হয় আমি তখন কসাইকে ফোন দেই সে আমাকে দ্রুত জবাই করা একটি কুকুর এনে দেয়।’

আর এজন্যই প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করা কুকুর বিড়াল আনা হয় কষাইখানায় যা জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে রেস্তোরাগুলোতে বিক্রি হয়ে যায়। একটি পরিসংখ্যানে বলা হয় প্রতিবছর চীনে দশ থেকে বিশ মিলিয়ন কুকুর হত্যা করা হয়। যা রীতিমত একটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পর্যায় পরে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কুকুরের মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে মানুষের কলেরা এবং জলাতঙ্ক হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন