ফেব্রুয়ারি মাসে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য

  • জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ০৭:১০ পিএম

ঝিনাইদহ : ফুল ছাড়া কি প্রিয় মানুষকে মনের কথা জানানো যায়। তাইতো ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় ফুলচাষি ও ফুলকন্যাদের ব্যস্ততাও। প্রতিবছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে।

এই চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলচাষিরা। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কালীগঞ্জে ফুল চাষ। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার ১২টি গ্রামের ২৩৮ একর জমিতে এখন চাষ হচ্ছে গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গ্লাডিওলাসসহ নানা জাতের ফুল। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এ জেলার ফুলচাষিরা কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে। এলাকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিন চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোয়। কথা হয় উপজেলার ডুমুর তলার চাষি মশিয়ার রহমানের সঙ্গে।

তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফুল চাষ দেখে কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০ শতক জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছেন তিনি। আশ্বিন মাসে চারা লাগানোর পর ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় ফুল আসে। গত এক সপ্তাহে তিনি ১০ হাজার টাকার ফুলও বিক্রি করেছেন। এই ২০ শতক জমি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তার খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, দড়িতে ফুল গেঁথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ গাঁদা ফুল থাকে। ফুলের মূল্য কম থাকলে এক ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। দাম বাড়লে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। আরেক চাষি মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি ১১ শতক জমিতে আগাম গাঁদা ফুল চাষ করেছেন। আয় করেছেন ৬০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া একই গ্রামের মহাসিন, আতিয়ার ও মিজানুর রহমানও তাদের জমিতে ফুল চাষ করেছেন। ফুলনগরী বলে খ্যাত বড়ঘিঘাটি গ্রামের ফুলকন্যা নাজমা, নুরজাহান, স্বরসতী ও আয়েশা বেগম জানান, বছরের বারো মাসই ফুল তোলার কাজ করেন তারা। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন সামনে রেখে কাজ বেশি করতে হয়। আয় উপার্জনও বেশি হয়। তারা জানান, এখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সকাল-বিকাল কাজ করতে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, প্রতি ঝোপা ফুল তুলে গেঁথে দিলে ফুল মালিক ১০ টাকা করে দেন। প্রতিদিন তারা ১২ থেকে ১৮ ঝোপা ফুল তুলতে পারেন। অনেকে আবার স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গৃহপালিত পশু কেনেন। এরপর ফুলের কাজ করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। এভাবেই এ এলাকার প্রায় প্রতি বাড়ির নারীরা এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, শুধু কালীগঞ্জ উপজেলায়ই ২৩৮ একর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে।

এ ছাড়া জেলার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট, খড়িকাডাঙ্গা, দৌলতপুর, কাদিরডাঙ্গা, বিনোদপুর, খালকোলা, বালিয়াডাঙ্গা, দাদপুর, ধলা, গোপিনাথপুর, ডুমুরতলা,বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকূপ, গুটিয়ানী, সদর উপজেলার গান্নাসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ফুল চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট গ্রামে।

সারাদেশের আড়তগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো। কিন্তু ফুল দ্রুত পঁচনশীল এবং এটি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় লোকসান গুণতে হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর