দ্বিতীয় স্ট্যাটাস

উচ্ছেদ কার্যক্রমের রূপকার মওদুদ!

  • ফেসবুক থেকে ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৯, ২০১৭, ০৮:৫৪ পিএম

ঢাকা: ‘আমার আর কী করার আছে? কী আর করবো? রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকবো’- আক্ষেপমাখা এ কথাগুলো বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের। গত ৭ জুন রাজধানীর গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বরে এক বিঘা ১৩ কাঠা জমির ওপর নির্মিত বাড়িটি দখলমুক্ত করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অভিযান চালালে দীর্ঘ তিন যুগ ধরে বাড়িটিতে সপরিবারে বাস করে আসা বিএনপি নেতা মওদুদ একথা বলেন।

ব্যারিস্টার মওদুদের বাড়ি দখলমুক্ত করার ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের মেয়ে Shawan Mahmud মওদুদের ছবিসহ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে লেখেন-

‘অনেক শরীর খারাপেও এই ছবিটা আমাকে সকাল সকাল সোজা করে দাঁড়িয়ে দিলো। দেশ স্বাধীন হবার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শহীদ পরিবারদের বেশ কিছু বাড়ি নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে উপহার দিয়েছিলেন। তার মধ্যে আমাদের বাড়িটি ছিল ১নং মালীবাগ। 

সেই ছবিটা

’৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একদিনের নোটিশে সে বাড়িটি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়। একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে স্যুটকেসের ওপর মা বসিয়ে রেখেছিলেন আমায়। বসে বসে পুলিশের তাণ্ডব দেখেছিলাম সেদিন। দোতলা থেকে বাবার ব্যাগ ফেলছিল ওরা। এলপি রেকর্ডগুলা চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলছিল বারান্দা থেকে। নিচের তলার সংগীত স্কুলের হারমোনিয়াম তবলা তানপুরা উঠোনের এখান ওখানে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছিল ওরা। আমি জানতাম না রাতে কোথায় থাকবো সেদিন। 

সেই উচ্ছেদ প্রকল্পের প্রধান উদ্যোক্তা মউদুদকে স্যুট পরে মাধবীলতা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তার উচ্ছেদ হওয়া বাসার সামনে বলতে শুনলাম যে তিনি ফুটপাতে থাকবেন। হা হা হা মউদুদ সাহেব ’৮২ সালের উচ্ছেদ ভুলি নাই। ভুলবো না। ইটটি মারিলে পাটকেলটি খাইতে হয়। ওহ্ আরেকটা কথা, সেদিন আমরা যদিও জানতাম না কোথায় থাকবো তারপরও ফুটপাতে থাকবার কথা ভাবিনি। প্রতিবেশীর খালি বাসাটা তাৎক্ষণিক ভাড়া নিয়ে নিয়েছিলাম আমরা।

আমি একশো বছর বাঁচবো। 
হিসাব নিয়ে তারপর যাবো।

Shawan Mahmud এর ওই স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। ঘটনার পরদিন আজ শুক্রবার (৯ জুন) আবারো একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিন। লিখেছেন- 

বিষয় - মওদুদ
গতকাল আমার লেখা স্ট্যাটাসটি নিয়ে যাদের সংশয় তাদের বলছি। আজ স্পষ্ট করে আবারও বলছি। ’৮১ সালে জিয়ার মৃত্যুর পরে কয়েক মাসের জন্য বিচারপতি সাত্তার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় বসেন। ’৮২ সালের ২৪ মার্চে এরশাদ ক্যূ এর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা হরণ করেন।

সাত্তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ’৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যে সব উচ্ছেদ কার্যক্রম করা হয় তার মূল রূপকার ছিল সেই সময়েও মন্ত্রী হওয়া এই মওদুদ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও এই কাজে সাহায্য করেছিল মউদুদকে। এমন কি পাকিস্তান থেকে বাড়ির নকল দলিল বানিয়ে এনেছিল ওরা, আমরা অবৈধ বসবাসকারী তা প্রমাণ করবার জন্য।

এই নিয়ে যাদের মনে সংশয় কাজ করছে আমার কথায়, দয়া করে তারা সেই এক মাসের উচ্ছেদ তাণ্ডব নিয়ে খোঁজ করে দেখবেন। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, শুধু শহীদ আলতাফ মাহমুদের পরিবারই নয়, মুক্তিযুদ্ধের আরো কত শহীদ পরিবারকে তখন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। একজন শহীদ কন্যা কোনো কথা বললেই তা বিশ্বাস করবার দরকার নেই আপনাদের।

আমি সাধারণ মানুষ। আমাকে সাধারণ মানুষেরা ভালোবাসে। আমি তাদের সাথে আমার অপমান, ব্যথা, বেদনা নিয়ে কথা বলি। তারা সমবেদনার হাত নিয়ে পাশে থাকে। সেখানে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করে না কখনও।

সোনালীনিউজ/এন