‍‍`গরিবের ট্রেন‍‍` যেমন চলছে

  • সোনালীনিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২০, ০৮:৫৮ এএম

ঢাকা: রেলের মেইল ট্রেনগুলোতে সাধারণত নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত যাত্রীই বেশি ভ্রমণ করে থাকেন। দূরপাল্লার হলেও স্টেশনে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে মেইল ট্রেন। ভাড়াও তুলনামূলক কম। দাঁড়িয়ে-বসে, গাদাগাদি করে ভ্রমণ করায় বাড়তি যাত্রী পরিবহন করা যায়। অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হওয়ার কারণে ট্রেনগুলো থেকে রেলের আয়ও হয় বেশি। কিন্তু 'গরিবের ট্রেন' হিসেবে পরিচিত এসব ট্রেনের একেবারে বাজে অবস্থা।

ট্রেনগুলোতে পর্যাপ্ত কোচ (বগি) দেওয়াই যাচ্ছে না, আবার যেসব কোচ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোও জরাজীর্ণ। ভালো নয় ইঞ্জিনের অবস্থাও। এমনকি প্রথম শ্রেণির ট্রেনে নতুন কোচ সংযোজনের ফলে যেসব কোচ থেকে যায়, 'বিধি-নিষেধের' কারণে এসব ট্রেনে সেগুলোও ব্যবহার করা যাচ্ছে না! এ ছাড়া অনির্ধারিত স্টেশনে যাত্রাবিরতি ও সময় মেনে না চলার বিষয় তো রয়েছেই। ট্রেনগুলোর প্রতি এমন বিমাতাসুলভ আচরণে রেলওয়ের প্রতি ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট যাত্রীরা।

মেইল ট্রেনের চেয়ে লোকাল ট্রেনগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। এসব ট্রেনের লক্কড়ঝক্কড় কোচের অনেক দরজা-জানালাই থাকে ভাঙা। টয়লেটগুলো এত বেশি নোংরা থাকে যে, এগুলো ব্যবহারের অবস্থা থাকে না। টয়লেট থেকে আসা দুর্গন্ধে বসা দায় হয়ে পড়ে। থাকে না পানি-বিদ্যুৎ। আবার এসব ট্রেনে ব্যবহার করা হয় একেবারে পুরোনো ইঞ্জিন। ট্রেনকে তুলনামূলক আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী বাহন বলা হলেও মেইল ও লোকাল ট্রেনের এখন দুরবস্থা। তুলনামূলক সাশ্রয়ী হওয়ায় চরম ভোগান্তি সঙ্গী করে চলাচলে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।

দেশের বিভিন্ন আন্তঃনগর রুটে বেশ কয়েকটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করে ঢাকা মেইল, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী উপবন এক্সপ্রেস ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচল করে জালালাবাদ এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করে বিজয় এক্সপ্রেস ও নাছিরাবাদ এক্সপ্রেস। এর বাইরে আরও বেশ কিছু মেইল ট্রেন রয়েছে। সব মেইল ট্রেনেরই প্রায় একই অবস্থা। উল্লেখযোগ্য আন্তঃনগর ট্রেন হলেও বরাবরই অবহেলার শিকার মেইল ট্রেনগুলো।

চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ১৯৮৫ সালে চালু হয়েছিল মেঘনা এক্সপ্রেস। মেঘনা নদীর মাধ্যমে বরিশাল জেলার অনেক যাত্রী চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ট্রেনটি ব্যবহার করে থাকেন। ট্রেনটিতে সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ৯শ'। কিন্তু প্রতিদিন আসন সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরেও এই ট্রেনের কোনো উন্নতিই হয়নি। সেই পুরোনো কোচ ও পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হচ্ছে ট্রেনটি। অথচ মেঘনা এক্সপ্রেস রেলের একটি লাভজনক ট্রেন। যাত্রী ও লাভ- দুটিই থাকায় ট্রেনটিতে নতুন ইঞ্জিন ও কোচ সংযোজনের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু ট্রেনটি নিয়ে রেলের তেমন কোনো মাথাবাথাই নেই।

রেলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন হচ্ছে বিজয় এক্সপ্রেস। ময়মনসিংহ অঞ্চলের সঙ্গে চট্টগ্রাম, ফেনী, লাকসাম, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জের লাখো যাত্রীর প্রত্যাশা পূরণে ২০১৪ সালে ট্রেনটি চালু করা হয়। কিন্তু শুরুর দিকে ট্রেনটি নিয়ম মেনে চললেও একপর্যায়ে বিড়ম্বনা বাড়ে। এমনতিইে পুরোনো ইঞ্জিন ও কোচ দিয়ে চালানো হচ্ছে। তার ওপর নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়া এবং অনির্ধারিত স্টেশনে যাত্রাবিরতি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ট্রেনটির বিরুদ্ধে।

মেইল ট্রেনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুট রেলের দুটি লাভজনক ও গুরুত্বপূর্ণ রুট। এই দুটি চলাচলকারী মেঘনা ও বিজয় এক্সপ্রেসের দুরবস্থা নিরসনে জরুরিভিত্তিতে মানসম্মত কোচ লাগানোর প্রয়োজন বলে মনে করছেন খোদ রেলের কর্মকর্তারাই। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী প্রথম শ্রেণির আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসে আমদানি করা নতুন কোচ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে ট্রেনটি থেকে পুরোনো যেসব কোচ পাওয়া গেছে, সেগুলো ওই দুটি ট্রেনে সংযোজনের অনুমোদন চেয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও সেই অনুমোদনও মেলেনি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, আমরা এসব কোচ মেঘনা ও বিজয় এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলোতে যুক্ত করতে অনুমতি চেয়ে রেল ভবনে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি। তবে সুবর্ণ থেকে পাওয়া সাদা রংয়ের কোচগুলো ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত করার একটি প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।

চট্টগ্রামের ষোলশহর-দোহাজারী লাইনে ছয় জোড়া ট্রেনের মধ্যে বর্তমানে চলাচল করে মাত্র দুই জোড়া লোকাল ট্রেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রেনগুলোর করুণ দশা। খোলা টয়লেট থেকে আসা দুর্গন্ধে সিটে বসা যায় না। রাতে চলাচলের সময় ট্রেনে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় চোর-ছিনতাইকারীর উৎপাতও আছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে রেলের সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রথম শ্রেণির ট্রেনগুলোতে নতুন নতুন ইঞ্জিন ও বগি সংযোজনের পরিকল্পনা থাকলেও মেইল ও লোকাল ট্রেনগুলো নিয়ে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ আপাতত নেই। ট্রেনগুলো যেভাবে চলছে, সেভাবে চলবে।সমকাল

সোনালীনিউজ/এইচএন