‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ এই চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২, ০৮:৪৪ পিএম
জাকির হোসেন।ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ: সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন (৪৮) ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর। এর আগে স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে একজন নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখন তিনি কোটিপতি। নামে বেনামে অসংখ্য সম্পদ রয়েছে তার।

হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া জাকির হোসেনকে নিয়ে তোলপাড় ময়মনসিংহ। তার ব্যাপারে তদন্ত করতে গঠিত হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিও।

জাকির কীভাবে একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

জানা গেছে, নিরাপত্তাকর্মী থেকে অফিস সহকারী হওয়া জাকিরের রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, বিশাল জায়গাজুড়ে একাধিক মৎস্য খামার, শহর ও গ্রামে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এসব তথ্যের দাবিদার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন জাকির। তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়ায়। বাবার নাম হাছেন আলী (মৃত)।

নিরাপত্তাকর্মী থেকে তিনি যে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হয়েছেন, তার পেছনেও বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২৪ আগস্ট তিনি অফিস সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধির নিয়ম বহির্ভূত। এবং বিষয়টি নিয়ে একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনও হয়েছিল।

অভিযোগ আছে, পদোন্নতি পেয়ে জাকির হোসেন জেলার স্বাস্থ্য সেক্টরে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। এভাবে তিনি জেলার ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স ও নবায়ন করে দেওয়ার নামে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।

একইসঙ্গে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাসপাতালে আসা আহতদের রিপোর্ট জালিয়াতি বাণিজ্যও করতেন তিনি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষে দুটি মামলা হয়। এসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে বলেও জানা গেছে।

সাবেক নিরাপত্তাকর্মী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। জেলা সিভিলে সার্জন কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে একাধিক ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন তৎকালীন সিভিল সার্জন। কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জায়েদ মাহবুব খান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- একই হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) প্রণেশ চন্দ্র পণ্ডিত ও ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. মেহেদী হান্নান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে সময় জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ চলতি বছর গত ২২ জুন এক চিঠিতে জাকিরের বিরুদ্ধে ফের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ফের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটি প্রধান ডা. জায়েদ মাহবুব খান জানান, জাকির হোসেন দুর্নীতির মাধ্যমে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদানেও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।  

এসব অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আগামী ৫ জুলাই অফিস সহকারী জাকির হোসেনকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তদন্ত বোর্ডের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। অনুসন্ধানেও প্রয়োজনে অভিযোগের অধিকরত তদন্তও হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

অভিযোগ, তদন্ত কমিটি নিয়ে কথা হলে সবকিছুই অস্বীকার করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় একটি মিথ্যা রিপোর্ট হয়েছিল। এ ঘটনায় আমি মামলা দায়ের করেছি। ওই মামলার তদন্তে এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমার কী সম্পদ আছে তাও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এখন তদন্ত হলে, হোক।

তিনি আরও বলেন, মূলত একটি চক্র আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে এসব করাচ্ছে। আমি গত চার বছর ধরে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতালের ফাইলের কোনো কাজ করি না। অথচ, একদল লোক আমাকে নাজেহাল করতে এসব করাচ্ছে।

পদোন্নতি প্রসঙ্গে জাকির বলেন, সারা দেশের ন্যায় ময়মনসিংহ থেকে আমিসহ দুজন গার্ড থেকে পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হই। যোগ্যতা না থাকলে পদন্নোতি হতো না বলেও তিনি দাবি করেন।

সূত্র-বাংলানিউজ২৪

সোনালীনিউজ/আইএ