৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের উদ্যোগ সরকারের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২২, ০৩:৪২ পিএম

ঢাকা: নতুন অর্থবছরের শুরুতেই উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয়ে কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সব রকম যানবাহন কেনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আপ্যায়ন ব্যয়, মনিহারি ব্যয়, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা খাতে বরাদ্দের অর্ধেক খরচ করা হবে। 

একইসাথে সব রকম প্রকল্প, কর্মসূচি ও স্কিমের কমিটির সভায় সম্মানী বাবদ ব্যয় বন্ধ করা হয়েছে। মূলত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করার পর ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পে অর্থ ছাড় স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর 'বি' ক্যাটাগরির প্রকল্পে সরকারি অংশের বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা হবে। তবে ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করবে সরকার।

রোরবার (৩ জুলাই) নতুন অর্থবছরের প্রথম কার্যদিবসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে আলাদা তিনটি পরিপত্র জারি করে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। 

জানা গেছে, সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এসব নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি, সরকারের ঋণ কমিয়ে রাখাসহ বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য এসব কৃচ্ছ্র সাধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা ধারণা করছেন, এসব উদ্যোগের ফলে পুরো অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। 

তারা আরো জানিয়েছেন, গাড়ি কেনা বাবদ আট হাজার ৮০ কোটি টাকা এ বছরের বাজেটে বরাদ্দ আছে। এর পুরো বরাদ্দের ব্যয় স্থগিত থাকবে। আর প্রশিক্ষণ, মুদ্রণ মনিহারি, বিভিন্ন সভার সম্মানী বাবদ বরাদ্দ আছে আরো আট হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেক ব্যয় হবে। এতে সরকারের ঋণ নেওয়া বা রাজস্ব সংগ্রহের ওপর চাপ কমবে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার উন্নয়ন ও পরিচালন মিলিয়ে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে চার লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি পরিচালন ব্যয়। আর উন্নয়ন ব্যয় দুই লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এডিপির বরাদ্দের মধ্যে ৬০ শতাংশ সরকারি অর্থে এবং বাকি ৪০ শতাংশ বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণ থেকে নিয়ে করা হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের উদ্যোগটি অবশ্যই ইতিবাচক। গাড়ি কেনা, ভ্রমণ, কমিটির সভার সম্মানীসহ অন্যান্য পরিচালন ব্যয় কমানোর সুযোগ আছে। আর এডিপির ক্ষেত্রে উদ্যোগটি ভালো। কারণ এডিপিতে অনেক প্রকল্পের অনুমোদন থাকে, কিন্তু বরাদ্দ থাকে সামান্য। এতে ওই প্রকল্পের বাস্তবায়নে অনেক সময় লাগে। বাড়তি ব্যয় হয়। ক্যাটাগরি করে সুষ্ঠুভাবে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে দেশ ও সরকার উপকৃত হবে। তবে এতে কাজের মান যাতে ঠিক থাকে, সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দরকার।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য ইতিবাচক। এখন দেখতে হবে উদ্দেশ্যের সাথে উদ্যোগের সমন্বয় কীভাবে হচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে আমদানি ব্যয় কমানো, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত এবং বিনিময় হারের ওপর চাপ কমে আসে। আবার অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে মূল্যস্ম্ফীতির ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা কমানো। সেজন্য সরকারের অর্থে আমদানি কমানো নিশ্চিত করতে হবে।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি কি হবে, তা নিয়ে গত ১৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকল্পের ক্যাটাগরি করে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগেও এ ধরনের ক্যাটাগরি করা হয়েছিল। এ বছরও করা হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে চলমান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করা। পাশাপাশি সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

সোনালীনিউজ/আইএ