জিকা ভাইরাসের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম

ঢাকা : চলতি বছর ঢাকাসহ সারা দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের কারণে এবার জিকা ভাইরাসের ঝুঁকি বেড়েছে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কেননা, এই এডিস মশা জিকা ভাইরাসের বাহক। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পাওয়া গেছে জিকার অস্তিত্ব।

মানবদেহে সংক্রমিত জিকা শনাক্ত করার ব্যবস্থা দেশের হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নেই। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে জিকা শনাক্তের ব্যবস্থা আছে। ডেঙ্গুর ব্যাপকতা সৃষ্টির পর তা নিয়ে সরকার যতটা সতর্ক, সে ধরনের সতর্কতা কি জিকা নিয়ে আছে? সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, জিকা নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই।

ব্রাজিলে জিকার ব্যাপক প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ভারতেও জিকার অস্তিত্ব পেয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পর্যন্ত। সে হিসেবে বাংলাদেশও রয়েছে জিকার ঝুঁকিতে।

প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে সিলেটে জিকা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। তখন ব্রাজিলে জিকার প্রাদুর্ভাব চলছিল। সিলেটে পাওয়ার পর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিমানবন্দর, নৌ-বন্দর, স্থলবন্দরসহ বৈদেশিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় কড়া নজরদারির আওতায় আনে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, দেশের শহর-গ্রামগুলোয় এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে এই ভাইরাস বাংলাদেশে চলে এলে ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত ও মিয়ানমারে জিকা পৌঁছে গেছে বলে বাংলাদেশ বড় ঝুঁকিতে থাকবে।

জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল উগান্ডায় ১৯৪৭ সালে। এটি পাওয়া যায় এক প্রজাতির বানরের দেহে। ১৯৫৪ সালে মানবদেহে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল নাইজেরিয়ায়। এরপর আফ্রিকাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের কিছু দ্বীপে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর বড় প্রাদুর্ভাব হয়েছে ২০১৫ সালে ব্রাজিলে। এর লক্ষণগুলো হলো হালকা জ্বর, চোখে ব্যথা ও লালচে রঙ, মাথা ব্যথা, গিঁটে গিঁটে ব্যথা এবং শরীরে র‍্যাশ। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, মশাবাহিত জিকা ভাইরাস অনেক ভয়ানক।

এর ফলে স্নায়ু বিকল হয়ে যেতে পারে যাতে অস্থায়ী পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে। আরো ভয়াবহ হলো, গর্ভবতী নারী এতে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশু মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হতে পারে। এতে শিশুর মস্তিষ্ক সঠিক আকারের হয় না। এমন শিশুদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের দিকে ব্রাজিলে কয়েক হাজার শিশু এমন সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাকেন্দ্রের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে জিকার অস্তিত্ব মেলায় আমাদের বড় ধরনের ঝুঁকিই রয়েছে। সাবধান থাকা উচিত। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই জরুরি। যদি একবার জিকার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে, সেটা হবে ভয়াবহ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই