তিন কারণে ঊর্ধ্বমুখী করোনা

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২১, ০৯:০৭ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।সর্বশেষ শুক্রবার (২ এপ্রিল) দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬ হাজার ৮৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।মারা গেছে অর্ধশত। এখনই এ পরিস্থিতির লাগার টেনে না ধরতে পারলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মতে, মূলত তিনটি কারণে দেশে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যে পরিবর্তিত ধরন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট দেশে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে উষ্ণ আবহাওয়া। স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে অবাধ চলাফেরাও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখছে।

অবশ্য জেনেভার বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এক প্রতিবেদনে বলেছে, আবহাওয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাসের ব্যাপকতার সম্পর্কটি এখনো স্পষ্ট নয়। ভবিষ্যতে মৌসুমি রোগ হিসেবে কোভিড-১৯ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এবিষয়ে ৪২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের এ বিশেষায়িত সংস্থা। দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ এ পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা সম্প্রতি বলেছিলেন, পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার হয়তো লকডাউনে যাবে না, তবে কিছু কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কী করছে, তা নিয়ে অনেকটাই অন্ধকারে রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ। নিজেদের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতবিনিময় বা সভা প্রায় বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে। 

কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি অধিদপ্তরের সঙ্গে সভা হয়েছিল। জানি না কমিটি আছে, নাকি বিলুপ্ত হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল, অধিদপ্তর তা নিচ্ছে না।

করোনার ইউকে ভেরিয়েন্ট:

করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যে পরিবর্তিত ধরন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সমীর সাহা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভাইরাস এখন একটু বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। দেশে অন্য ভেরিয়েন্ট ছিল, এখন ইউকে ভেরিয়েন্ট ছড়াচ্ছে। যত ছড়াবে, ভাইরাসের রূপান্তরের আশঙ্কা তত বেশি। রূপান্তরিত হয়ে “বাংলাদেশ ভেরিয়েন্ট” হওয়ার ঝুঁকিও আছে।’

বিসিএসআইআর সূত্র বলছে, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) সর্বশেষ ১২০টি করোনারভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের কাজ শেষ করেছে।এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল ইউকে ভেরিয়েন্ট।

গত বছরের শুরুর দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর এ ভাইরাসের ২০ হাজারের বেশি রূপান্তর ঘটেছে বা মিউটেশন হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে রূপান্তরিত নতুন ধরন শনাক্ত হয়। নতুন এ ধরনের সংক্রমণ করার বা মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা অনেক বেশি, প্রায় ৭০ গুণ।

সম্প্রতি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারি দেশে প্রথম ইউকে ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয় যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের নমুনা পরীক্ষায়।

তিনি জানান, আইইডিসিআরের পরীক্ষাগারে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১৬ জনের নমুনায় ইউকে ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআর করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে নতুন ধরন সম্পর্কে জেনেছে।

আবহাওয়া:
বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিল মূলত গত বছর মার্চ থেকে আগস্ট মাসে। এই ছয় মাসের আবহাওয়া মূলত উষ্ণ থাকে। শীতের আবহাওয়ায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। শীত শেষে উষ্ণ আবহাওয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ আবার বাড়ছে।

বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতির বিষয়ে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শীতের আবহাওয়া এ দেশে জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের প্রকোপ থাকে। এদের উপস্থিতির কারণে নোবেল করোনাভাইরাসের প্রাবল্য কম ছিল। উষ্ণ আবহাওয়ায় অন্য ভাইরাস অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে, এককভাবে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি এখন বেশি। তাই সংক্রমণ বাড়ছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ সাধারণত মৌসুমভিত্তিক। হেমন্ত-শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি আর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় করোনার সংক্রমণ বেশি। করোনাভাইরাস যদি আরও কয়েক বছর থেকে যায়, তাহলে তা মৌসুমি প্রবল রোগ হিসেবে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য:
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান ছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড মাঠপর্যায়ে নেই। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সবকিছু চলছে মহামারি শুরু হওয়ার আগের অবস্থায়। গত বছর মার্চ মাস থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। পর্যটনকেন্দ্রে এখন বন্ধ করা হলেও মানুষের ভিড়ের কমতি ছিলো না বিগত দিনে। বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে সমাগম থেমে নেই। এসব ক্ষেত্রে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। 

সোনালীনিউজ/আইএ