দেশজুড়ে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। হাসপাতাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, মৃত্যুর মিছিলও থামছে না। চলতি বছর এডিস মশাবাহিত এই রোগে এখন পর্যন্ত ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। উদ্বেগজনক তথ্য হলো—মৃতদের অর্ধেকেরও বেশি তরুণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারীদের ৫৩ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে সেই বয়সী মানুষরা, যারা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর সবচেয়ে কার্যকর অংশ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগে এত মানুষের মৃত্যু ‘জাতির জন্য লজ্জা’। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, মশা নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থা ও জনসচেতনতার অভাব-এই তিনটি কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল উপায় হলো মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। কিন্তু আমরা এক টন ময়লা সরিয়ে দশ টন নতুন করে জমতে দিচ্ছি। কাগজে-কলমে পরিষ্কার অভিযান চলে, বাস্তবে তা টেকসই নয়।’
তার মতে, সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিপাত এডিস মশার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি থেমে গেলেও ডেঙ্গু অন্তত আরও দুই মাস চলবে-প্রথম মাসে সংক্রমণ বাড়বে, পরের মাসে ধীরে ধীরে কমবে।’
ডা. মুশতাক আরও বলেন, ‘আমাদের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধ, চিকিৎসা ব্যবস্থা সবই আছে। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে মানুষ মরছে। এটা সত্যিই লজ্জাজনক।’
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সৌভাগ্যক্রমে এই সময় নতুন কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
ডিজিএইচএস জানিয়েছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম-যা দ্রুত শারীরিক অবনতি ঘটায়। দ্বিতীয় কারণ এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম, যা একাধিক অঙ্গ বিকল করে ফেলে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই যদি বড় পরিসরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সচেতনতা কর্মসূচি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় সমন্বয় না হয়, তাহলে জানুয়ারি পর্যন্ত সংক্রমণ আরও বিস্তার লাভ করতে পারে।
এসএইচ