স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯১ হাজার ৬০২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৬৭ জনের। এই সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৯৪৯ জন।
শীতের আগমনে সংক্রমণ কমার কথা থাকলেও বরং আক্রান্ত ও মৃত্যু-দুই সংখ্যাই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
২৫ নভেম্বর পর্যন্ত নভেম্বর মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৭৪০ জন। অক্টোবর মাসে আক্রান্ত ছিলেন ২২ হাজার ৫২০ জন, সেপ্টেম্বর ১৫ হাজার ৮৬৬ জন, আগস্ট ১০ হাজার ৪৯৬ জন, জুলাই ১০ হাজার ৬৮৪ জন, জুন ৫ হাজার ৯৫১ জন, মে ১ হাজার ৭৭৩ জন, এপ্রিল ৭০১ জন, মার্চ ৩৩৬ জন, ফেব্রুয়ারি ৩৭৪ জন এবং জানুয়ারি ১ হাজার ১৬১ জন।
অক্টোবর মাসে ৮০ জন, সেপ্টেম্বর ৭৩ জন, আগস্ট ৩৯ জন, জুলাই ৪১ জন, জুনে ১৯ জন, মে ৩ জন, এপ্রিল ৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন এবং জানুয়ারিতে ১০ জনের মৃত্যু হয়।
জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং নারী ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
এ সময়ে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারী ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাজের প্রয়োজনে পুরুষরা ঘরের বাইরে বেশি থাকায় তাদের আক্রান্তের হার বেশি।
বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এবং সবচেয়ে বেশি মৃত্যুও এই বয়সীদের।
সিটি করপোরেশন ও বিভাগভিত্তিক তথ্য বলছে, বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ—২০ হাজার ৩০৬ জন।
এরপর চট্টগ্রামে ১২ হাজার ৯৪১ জন, ঢাকা বিভাগে সিটি করপোরেশনের বাইরে ১৫ হাজার ৬৪০ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৪ হাজার ৪০৬ জন এবং দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ৬০ জন।
সবচেয়ে কম সংক্রমণ দেখা গেছে সিলেট বিভাগে-মাত্র ৩৫৭ জন। বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন ৪৭ জন, চট্টগ্রামে ২৯ জন, ঢাকা বিভাগের বাইরে ৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬২ জন এবং সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে—১৬৭ জন। খুলনায় ১১ জন, ময়মনসিংহে ২০ জন, রাজশাহীতে ২০ জন এবং সিলেটে ২ জন মারা গেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাসার জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে এবং জানুয়ারিতে কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের উঁচু ভবনের বেসমেন্ট ও পার্কিং এলাকা, পানি সংকটগ্রস্ত এলাকায় সংরক্ষিত পানি এবং নির্মাণাধীন ভবন-সবখানেই এডিস লার্ভা পাওয়া যায়। অনুকূল পরিবেশ থাকায় মশার বিস্তারও দ্রুত হচ্ছে।
তার মতে, সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা, কোথাও পানি জমতে না দেওয়া—এগুলোই এখন জরুরি।
২০১৯ সালে আক্রান্ত ১ লাখ ১ হাজার ৩৭৪ জন, মৃত্যু ১৬৪ জন, ২০২১ সালে আক্রান্ত ২৮ হাজার ৪২৯ জন, মৃত্যু ১০৫ জন
২০২২ সালে আক্রান্ত ৬২ হাজার ৩৮২ জন, মৃত্যু ২৮১ জন, ২০২৩ সালে আক্রান্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, মৃত্যু ১ হাজার ৭০৫ জন, ২০২৪ সালে আক্রান্ত ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন, মৃত্যু ৫৭৫ জন, ২০২৫ সালে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত ৯১ হাজার ৬০২ জন, মৃত্যু ৩৬৭ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার না করলে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এসএইচ