হংকংয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ, মেরে ফেলার শঙ্কায় ২০০ শিক্ষার্থী

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৩:১১ পিএম

ঢাকা : টানা তৃতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে হংকংয় পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা। সেখানে দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। তাদের দিকে লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইট ও পেট্রল বোমা ছুড়ছেন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা। দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়েছে। হংকং নির্বাহী প্রধান ক্যারি লাম বিক্ষোভকারীদের অস্ত্র জমা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে হুমকির সুরে বলেন, আত্মসমর্পণ ছাড়া বিকল্প নেই।

এএফপি জানায়, এখনও দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আটকা রয়েছেন। টানা তিনদিন ধরে তারা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের হুমকি দিয়েছে পুলিশ।

এমন পরিস্থিতিতে আরেকটি তিয়েনআনমেন স্কয়ার গণহত্যার শঙ্কা দানা বাঁধছে। ১৯৮৯ সালে চীনের রাজধানীতে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালায় চীনা সেনাবাহিনী। এতে শত শত, সম্ভবত সহস্রাধিক (নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই) বিক্ষোভকারী নিহত হন।

রোববার রাতে বড় বিক্ষোভের শুরুতে ক্যাম্পাসে এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী ছিল বলে জানিয়েছেন হংকংয়ের একজন গণতন্ত্রপন্থী আইনপ্রণেতা টেড হুই। তাদের মধ্যে অনেকে বের হতে পেরেছেন। অনেককে ধাওয়া করে আটক করেছে পুলিশ।

ক্যাম্পাসের বাইরে আতঙ্কের মধ্যে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়রা। ভয় জোরালো হচ্ছে অবরুদ্ধ শিক্ষার্থীদের গুলি করে মেরে ফেলতে পারে পুলিশ।

প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা গেছে, কাঁদানে গ্যাসের ঘন ধোঁয়ার মধ্যে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেলছে। আটক করা হয়েছে অন্তত ৪০০ জনকে। আটক হওয়া বা প্রাণভয়ে অনেকে নর্দমার টানেল দিয়ে পালাচ্ছেন।

অনেকে আবার ক্যাম্পাস ভবন থেকে দড়ি বেয়ে পাশের ব্রিজে নেমে পালানোর চেষ্টা করছেন। চ্যান নামের ৫০ বছর বয়সী এক মা বলেন, ‘তিনি আতঙ্কিত যে ক্যাম্পাসে পুলিশ গুলির তাণ্ডব চালাতে পারে। এতে আমার ১৮ বছরের সন্তান হয়তো আহত হবে অথবা মারা যাবে। আমি আশঙ্কা করছি এখানে আরেকটি তিয়েনআনমেন স্কয়ার গণহত্যালীলা সংঘটিত হতে পারে।’

চেয়াং নামের এক নারী বলেন, ‘তিনি একটি পার্কে পুলিশ বেষ্টনীর পাশে গত রাত কাটিয়েছেন। তিনি তার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের খোঁজ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।’ সে প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল বলে দাবি ওই মায়ের। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই উদ্বিগ্ন। তার জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। সন্তান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে পারে, এজন্য আমি আতঙ্কিত।’

ছাং নামের আরেক মা বলেন, ‘তার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে এখনও ক্যাম্পাসের ভেতরে অবরুদ্ধ রয়েছে। সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কিন্তু আমার কথা শুনবে না। সে চায় মুক্তভাবে মতপ্রকাশ করতে। তারা পুলিশকে বিশ্বাস করে না।’

ওয়াং নামে ৫০ বছর বয়সী এক বাবা বলেন, তার ১৭ বছরের মেয়ে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ সে আটক হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে আর দাঙ্গা বাঁধানোর অভিযোগ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।’

ডেইলি মেইল জানায়, ভয়ংকর বিক্ষোভ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার হংকংয়ে নতুন পুলিশ প্রধান নিয়োগ দিয়েছে চীন।

নিয়োগ পেয়েই ক্রিস ট্যাং পিং-কেয়াং বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ খণ্ডন এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার কাজের অগ্রাধিকারে থাকবে। বিক্ষোভে মুখোশের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সোমবার রায় দেয় হংকংয়ের সুপ্রিমকোর্ট।

সোনালীনিউজ/এমটিআই