তাইওয়ান উপত্যকায় মার্কিন বিমান শান্তি নষ্ট করছে যুক্তরাষ্ট্র: চীন

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২, ০২:১৮ পিএম

ঢাকা : চীনের সেনাবাহিনী বলেছে, তাইওয়ান উপত্যকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক বিমানের চলাচল আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে বিঘ্নিত করেছে।

শনিবার (২৫ জুন) চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছাকৃত এই কর্মকাণ্ড শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক। চীনের সেনাবাহিনী পিপল’স লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র কর্নেল শি ই এক বিবৃতিতে বলেন, মার্কিন বিমানের অভিযান পর্যবেক্ষণে সেনাবাহিনী বিমান ও স্থলবাহিনীর সমাবেশ ঘটানো হয়।

শুক্রবার (২৪ জুন) এই অভিযান পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে চীনা মুখপাত্র নিজেদের বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখার কথা জানান। তবে এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি মার্কিন নৌবাহিনী। তাইওয়ান দীর্ঘদিন ধরেই বারবার সামরিক উত্তেজনার কারণ হয়েছে। গৃহযুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১৯৪৯ সালে চীনের ভিন্ন মতাবলম্বীরা তাইওয়ানে পালিয়ে যাওয়ার পর এই উত্তেজনার শুরু।

তাইওয়ান উপত্যকায় নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে চীন। তবে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ এবং মার্কিন সরকারের দাবি চীন থেকে দ্বীপটিকে পৃথক করা এই উপত্যকা একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ।

এই সপ্তাহে তাইওয়ান দ্বিতীয়বারের মতো বড় আকারের চীনা অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলার পর সবশেষ উত্তেজনা দেখা দেয়। তাইওয়ান গত বৃহস্পতিবার বলেছে তারা তাদের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চলে ২২টি চীনা বিমানকে সতর্ক করেছে।

তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম জাতি হিসেবে মনে করে। তবে দ্বীপটিকে নিজের অংশ বলেই দাবি করে আসছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের সবচেয়ে বড় মিত্র মনে করে তাইওয়ান। দ্বীপটির আত্মরক্ষায় সহযোগিতা প্রদান নিয়ে ওয়াশিংটনের একটি আইনও রয়েছে।

সামপ্রতিক কয়েকটি ঘটনায় কথার লড়াই শুরু হয়েছে। তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে যুদ্ধবিমান পাঠানো বাড়িয়েছে চীন। গত মাসে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান বহরটি পাঠিয়েছিল দেশটি। এদিকে তাইওয়ানের জলসীমায় নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এভাবেই তাইওয়ান নিয়ে ক্ষমতাধর দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে।

চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন চালালে যুদ্ধ শুরু হবে এটাই বড় দুশ্চিন্তা। অতীতে বেইজিং বলেছে, প্রয়োজনে দেশটি শক্তি প্রয়োগ করে দ্বীপটি দখলে নেবে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখনই তেমন কিছু হচ্ছে না।

তাইওয়ানে আগ্রাসন চালিয়ে সফল হওয়ার মতো সামরিক সামর্থ্য চীনের আছে কি না, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নিজেদের আকাশ ও সমুদ্র প্রতিরক্ষা তাইওয়ান লক্ষণীয়ভাবে বাড়িয়ে চলেছে।

অবশ্য অনেকেই এ বিষয়ে একমত, তাইওয়ানে আগ্রাসন চালানোর মতো পদক্ষেপের মূল্য যে অনেক চড়া এবং ধ্বংসাত্মক হবে, বেইজিং তা স্বীকার করে নিয়েছে। আর তা কেবল চীনের জন্যই নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্যও।

ইনস্টিটিউট অব সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো উইলিয়াম চুং বলেন, অনেক কথার লড়াই হচ্ছে। তবে তাইওয়ানে আগ্রাসন চালাতে চাইলে চীনকে খুব খেয়াল করে ব্যবধানটা মাথায় রাখতে হবে, বিশেষ করে, বিষয়টা খুব বেশি ইউক্রেন সংকটের মতো হওয়ায়। চীনের অর্থনীতি রাশিয়ার চেয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে অনেক বেশি যুক্ত। তাইওয়ানের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’ চায় চীন। এ অবস্থানের ধারাবাহিকতার বিষয়টিই রোববার পুনর্ব্যক্ত করতে চেয়েছিলেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বলতে চেয়েছেন, উসকানিমূলক আচরণ করলেই কেবল ব্যবস্থা নেবে দেশটি। এই কাজটি হতে পারে যদি তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে বিষয়টি কঠোরভাবে এড়িয়ে গেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, তারা ইতিমধ্যেই একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র।

সোনালীনিউজ/এমটিআই