ইসরায়েল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর তিরস্কার

ইসরায়েলে নতুন সরকার দরকার: বাইডেন

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩, ০৪:১২ পিএম

ঢাকা : ইসরায়েলকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে কোনো তিরস্কার করার বিষয় অনেকটাই বিরল বলে বিশ্ববাসীর কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। অথচ এবারে সেই বিরল ঘটানার জন্ম দিলেন বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশটির মালিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করে আলোচনায় এসেছেন। বাইডেন নেতানিয়াহুকে তার সরকারের কট্টরপন্থী মনোভাবের পরিবর্তনের আহবান জানান। এসময় তিনি তেলআবিবের উপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগের আহবানও জানান। তিনি বলেন, এমনটা করা হলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সমাধান আসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনর জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রচারণার এক অনুষ্ঠানে বাইডেন ইসরায়েলকে উদ্দেশ্য করে তার কটুক্তিমূলক মন্তব্য ছুঁড়েন। তিনি বলেন, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অবিরাম হামলা মার্কিন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

বাইডেন বলেন, তারা (ইসরায়েল) বিশ্বের কাছে সমর্থন হারাতে শুরু করেছে।

[213187]

এ সময় গাজা এবং পশ্চিম তীরে রক্তপাতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শঙ্কার কথাও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এদিকে এমন সময়ে বাইডেনের মন্তব্যটি এসেছে যখন কিনা বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলোচনার জন্য ইহুদি রাষ্ট্রে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এর আগে নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, ইসরায়েল হামাসকে পুরোপুরি নির্মূলে এবং বন্দীদের পুনরুদ্ধারের জন্য মার্কিন সমর্থনে সন্তুষ্ট। তবে গাজা যুদ্ধের পরে করণীয় কী হতে পারে তা নিয়ে মিত্ররা ভিন্নমত পোষণ করছে বলেও মন্তব্য ছিল তার।

বাইডেন বিশেষভাবে ইসরায়েলের অতি ডানপন্থী রাজনীতিবিদ ইতামার বেনগভিরকে (জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী) লক্ষ্য করে বলেন, এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্ষণশীল সরকার।

তিনি বলেন, তাকে (নেতানিয়াহু) এই সরকার পরিবর্তন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পরিশেষে ইসরায়েল একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে "না বলতে পারে না।

যদিও অনেক ইসরায়েলি কট্টরপন্থী এটির বিরোধিতা করে আসছে‘’ বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন অধিপতির শাসক বাইডেন।

বাইডেন বলেন, এই অঞ্চলকে একত্রিত করার সুযোগ আমাদের কাছে এখনও রয়েছে ... এবং তারা এখনও এটি করতে চায়। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে বিবি (নেতানিয়াহু) এটা বুঝতে পেরেছেন যে তাকে শক্তিশালী করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে... আপনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে না বলতে পারেন না... এটা একটা কঠিন অংশ হতে যাচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার সুলিভান জানিয়েছিলেন যে, তার ইসরায়েল সফরের সময় তিনি ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গাজা যুদ্ধ শেষ করার সময়সূচী নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, "তারা এই যুদ্ধের সময়সূচী কীভাবে দেখছে তা অবশ্যই আমার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে থাকবে।" এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ ইসরায়েলে সফরের কথা রয়েছে তার।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতি তার জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করলেও তিনি এবং তার দল ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মৃত্যুর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে বাইডেন আজ (বুধবার) হোয়াইট হাউসে হামাসের হাতে বন্দী আমেরিকান পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার পরিকল্পনাও করেছেন। অন্যদিকে জ্যাক সুলিভান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ না বাড়ানোয় হামাসকে দায়ী করেছেন। এর আগে ২৪ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতিতে আসে উভয় পক্ষ। সুলিভান বলেন, এটি না বাড়ানোর জন্য হামাস দায়ী কারণ তারা আরও বন্দীকে "মুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।"

তিনি বলেন, ‘’হামাস আজ অবধি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী, বয়স্ক মানুষ, বেসামরিক নাগরিকদের ধরে রেখেছে। এবং তারা এখনও বলছেন- 'আরে, সবাই এখনই কীভাবে থামে।” এসময় তিনি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

পরদিনের নানা ঘটনাসমূহ : কাতারে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সমাবেশে যোগদানকারী মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা গাজায় যুদ্ধ শেষে কী পরিস্থিতি হতে পারে এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে তাদের ধারণাপ্রসূত আলোচনা করলেও বিধ্বস্ত অঞ্চলে তাদের নিজস্ব সৈন্য বা আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রেরণের বিষয়ে সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেন।

এ প্রসঙ্গে সোমবারে শেষ হওয়া বার্ষিক দোহা ফোরামে কাতার তাদের পূর্বের মন্তব্যের জের টেনে জানায়, গাজায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে কোনও আরব দেশ তাদের সামরিক বাহিনী পাঠাবে না।

এ সময় কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেন, ‘’এ অঞ্চলের কেউ মেনে নেবে না... এ অঞ্চলের মাটিতে সৈন্যদের বুটের কালিমা আঁকতে। এটা অগ্রহণযোগ্য।”

এমনকি চলমান পরিস্থিতিতে গাজায় কোনো আন্তর্জাতিক শক্তির ঘাঁটি স্থাপনার বিষয়েও তিনি  বিরোধিতা করেছিলেন। আল থানি বলেন, "আমাদের সবসময় ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে এমনভাবে কথা বলা উচিত নয় যেন মনে হতে পারে তাদের অভিভাবকের প্রয়োজন রয়েছে।"

ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই যথেষ্ট। ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে তাদের ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু গাজায় নয়। এ অঞ্চলের কর্তৃত্ব হামাসের হাতেই। এ সময় হামাস বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ বলেন, হামাসকে নির্মূল করা যাবে না। তারা “ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

এর আগে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিল যে, গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসন ব্যবস্থা চালু হতে পারে। শত্রুতার অবসান ঘটিয়ে তারা এই শাসনভার নিতে পারেন বলে মন্তব্য করেছিল মার্কিন প্রশাসন।

অবশ্য এ বিষয়ে নেতানিয়াহু তার দেয়া এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অধীনে পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গাজা শাসনে ফিরে আসার ব্যাপারে তার অতীতের অস্বীকৃতির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "গাজাকে হামাস-স্তান বা 'ফাতাহ-স্তান' হতে দেয়া হবে না।"

নেতানিয়াহু বলেন, "আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই: আমি ইসরায়েলকে অসলোর ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে দিব না।"

অবশ্য এ সময় নেতানিয়াহু কোন ভুলের কথা উল্লেখ করছেন সেটি স্পষ্ট না করেই বলেন, ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি পশ্চিম তীর এবং গাজায় সীমিত আকারে ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছিল।

এদিকে মঙ্গলবার প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) কার্যনির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হুসেইন আল শেখ অসলো চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানে উভয় পক্ষেই মৃতের সংখ্যা একেবারে কম নয় বলে নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেন।

আল শেখ বলেন, নেতানিয়াহুর অসলো চুক্তির বক্তব্যকেও যদি ধর্তব্যে আনি তবে এটা স্পষ্ট ৭ অক্টোবর যা ঘটেছিল তা সমস্ত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসন মনোভাব নিশ্চিত করছে। সূত্র: ডন অনলাইন

এমটিআই