মৃত্যুর ১৯ বছর পর ‘সন্ত’ হলেন মাদার তেরেসা

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৬, ০৫:০২ পিএম

মাদার তেরেসা, শুধু গরিব-দুঃখীর ‘মা’-ই নন। এবার থেকে তাঁকে ‘সন্ত’ বলেই জানবে গোটা বিশ্ব। তাই ভক্তি আর শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন মাদার তেরেসা। বিশ্বের লাখো-কোটি ভক্ত তাকে শ্রদ্ধা জানাবে ‘সন্ত’ হিসেবেই। জয় মাদার তেরেসা, জয়তু বিশ্ব মানবতা।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভ্যাটিক্যান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিস ১ লাখেরও বেশি ভক্তের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে মাদার তেরেসাকে ‘সন্ত’ উপাধিতে স্বীকৃতি দেন।

সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে চলছে প্রার্থনা সঙ্গীত। ৭০টি দেশের পররাষ্ট্রি মন্ত্রী উপস্থিত আছেন ওই মহাযজ্ঞে। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা ছাড়াও মাদারের ‘সন্ত’ ঘোষণার অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি দলও আছেন ভ্যাটিক্যান সিটিতে। এছাড়া গিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মন্বন্তর পীড়িত বাংলার মানুষদের কাছে মাদার সত্যিই হয়ে উঠেছিলেন নিজের ‘মা’। সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষের সেবার মাধ্যমে যিশুর সেবায় সদা নিয়োজিত ছিল তার প্রাণ।

মাদার তেরেসার এই আত্মত্যাগী জীব সেবাই ১৯৮০ সালে তাকে এনে দিয়েছিল ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ উপাধি। এর আগে ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন মাদার তেরেসা। 

৫ সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসার মৃত্যুর ১৯ বছর পূর্ণ হবে। তার মৃত্যুর ১৯ বছর পর তিনি সন্ত হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন। অর্থাৎ একদিন আগেই ভ্যাটিকান থেকে ‘বিশ্ব মাতা’ থেকে ‘সন্ত’ হয়ে গেলেন মাদার তেরেসা। এরই মধ্যে স্বীকৃতিও মিলেছে সারা বিশ্ব থেকে।

১৯৯৭ সালে মারা যান মাদার তেরেসা। তার মৃত্যুর পর তার দুটি অলৌকিক ক্ষমতার ঘটনার কথা সামনে আসে, দুজন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির মাদার তেরেসার নাম ধরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর এ দুটো ঘটনা মাদার তেরেসার সন্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার এক ধাপ এগিয়ে দেয়।

১৯১০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন মাদার তেরেসা, তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালে। কলকাতায় মিশনারিজ অব চ্যারিটির ১৯টি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সন্ত ঘোষণার পর ভারতের কলকাতায় মাদার তেরেসা স্থাপিত প্রতিষ্ঠান মিশনারিজ অব চ্যারিটিতেও অনুষ্ঠান হবে ।

যদিও মাদার তেরেসার স্থাপিত প্রতিষ্ঠান নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। সমালোচকদের মতে, চ্যারিটি হাসপাতালগুলোতে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। একইসাথে সমালোচকরা বলেন, মানবসেবায় একনায়কদের দেয়া অর্থ গ্রহণ করেছেন মাদার তেরেসা।

৮৭ বছর বয়সে মাদার তেরেসার মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালে এবং ২০০৩ সালে সন্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার একটি ধাপ ‘বিয়টিফিকেশন’-এ তাঁর নাম প্রথম প্রবেশ করে।

রোমান ক্যাথলিক চার্চের রীতি অনুসারে কাউকে ‘সন্ত’ ঘোষণা করার জন্য দুটি ‘অলৌকিক’ ঘটনা ঘটা প্রয়োজন। রোমান ক্যাথলিক চার্চের দাবি অনুসারে, ১৯৯৮ সালে মণিকা বেসরা নামের পশ্চিমবঙ্গের এক বাঙালি আদিবাসী মহিলার পেটের টিউমার সেরে গিয়েছিল মাদার তেরেসার ছবি দেখে প্রার্থনা করার ফলে। 

২০০২ সালে এই ঘটনাকে প্রথম ‘অলৌকিক’ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করে ভ্যাটিকান। পরের বছর, ২০০৩ সালে ঘটনাটিকে ‘অলৌকিক’ বলে স্বীকৃতি দিয়ে তৎকালীন পোপ দ্বিতীয় জন পল মাদারকে ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য’ বলে ঘোষণা করেন ‘বিয়েটিফিকেশন’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সন্ত হওয়ার সেটি ছিল প্রথম ধাপ।

এর পরের ‘অলৌকিক’ ঘটনাটি ২০০৮ সালের। ভ্যাটিকানের দাবি, ওই বছর ব্রাজিলে মাদার তেরেসার নামে প্রার্থনা করে সুস্থ হয়ে ওঠেন ব্রাজিলের এক যুবক। মস্তিষ্কে একাধিক টিউমার ছিল ওই যুবকের। ব্রাজিলের ওই রোগী অবশ্য কোনো দিন মাদারকে দেখেননি। গত বছর ১৮ ডিসেম্বর পোপ মৃতপ্রায় ওই ব্রাজিলীয় যুবকের সেরে ওঠার ঘটনাকে দ্বিতীয় ‘অলৌকিক’ ঘটনা হিসেবে স্বীকার করে নেন। 

রোমান ক্যাথলিক চার্চ দুটি ‘অলৌকিক’ ঘটনা স্বীকার করে নেয়ায় তখনই মাদার তেরেসার সন্ত উপাধি পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়। অপেক্ষা ছিল শুধু ভ্যাটিকানের তরফে তারিখ ঘোষণার।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি