গৃহযুদ্ধে মিয়ানমারের অর্ধেক মানুষই দারিদ্র্যপীড়িত: জাতিসংঘ

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৪, ০৯:১৮ পিএম

ঢাকা : মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের করাল গ্রাস মানুষকে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেনি বিলোপ হয়ে যাচ্ছে নাটকীয়ভাবে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে দারিদ্র্য। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দিনে ৭৬ ইউএস সেন্ট এরও নিম্ন আয়ে জিবীকা নির্বাহ করছে।

২০১৭ সালের পর থেকে এখন এই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেনি তিন বছর আগে যা ছিল তার চেয়ে এখন কমে অর্ধেক হয়েছে। বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির মুখে আছে তারা।

[221254]

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের তিনবছর পর দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি লোপ পাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির মুখে পরিবারগুলো খাবার থেকে শুরু করে শিক্ষা পর্যন্ত সবকিছুই কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

গবেষকরা ২০২৩ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের আরও ২৫ শতাংশ মানুষের জীবন দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি ‘সুতোয় ঝুলে থাকার’ এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে এনেছিলেন। আর এখন নতুন গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে থাকতে পারে বলেই অভিমত এর লেখকের।

গতবছর অক্টোবরের ওই সময় থেকে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী এবং জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত বেড়ে হাজার হাজার মানুষ পালাতে বাধ্য হয়েছে, উদ্বাস্তু হয়েছে, জীবিকা খুইয়েছে এবং ব্যবসা বন্ধ হয়েছে।

সিএনএন জানায়, ২০০৫ সালের পর থেকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে অনেকটা উন্নতি করেছিল মিয়ানমার। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিল দেশটি।

কিন্তু ২০২১ সালে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আটক করা হয় সু চিসহ বেসামরিক সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের।

[221253]

এরপর থেকেই সেনাশাসনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিক্ষোভে মিয়ানমারের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল এবং সহিংসতাবিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে আবার করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে থাকা দেশটির মানুষ আবার দারিদ্র্য জর্জরিত হয়েছে।

ইউএনডিপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যে কেবল দ্বিগুণ হয়েছে তাই নয়, মানুষ আরও অনেক বেশি গরিব হয়েছে।

ইউএনডিপি’র সহকারী মহাসচিব এবং এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক কান্নি উইগনারাজা বলেছেন, “সামগ্রিকভাবে মিয়ানমারের জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই দারিদ্র্যের মধ্যে আছে। কিন্তু আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সেইসব মানুষ যারা কোনওরকমে জীবনধারণ করে বেঁচে আছে। সুতরাং, দারিদ্র্য অনেক গভীরে পৌঁছেছে।

উইগনারাজা আরও বলেন, “মিয়ানমারের মধ্যবিত্ত শ্রেনি অক্ষরিক অর্থেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। আড়াই বছরে মধ্যবিত্ত শ্রেনিতে ৫০ শতাংশ ধস কেবল মিয়ানমারের জন্যই নয়, বরং যে কোনও দেশের জন্যই বিস্ময়কর।”

ইউএনডিপি’র গবেষণা প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের অক্টোবর এবং জুনের মধ্যকার তিনমাস সময়ে ১২,০০০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

এমটিআই