গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৪, ১০:২২ এএম

ঢাকা : গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইরায়েলিদের নতুন এক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যে যুদ্ধে কট্টর ডানপন্থি ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। বিশেষে করে কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে। অন্যান্য ক্রসিংয়েও একই কাণ্ড ছড়িয়ে পড়ছে।

বিবিসি জানায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ছবি ও ভিডিওর রীতিমত বন্যা বইছে। সেসব ছবি ও ভিডিওতে গাজার জন্য পাঠানো ত্রাণের লরি আটকে দিয়ে সেগুলো লুটপাট করতে এবং ত্রাণের প্যাকেট রাস্তায় ছুড়ে নষ্ট করতে দেখা যাচ্ছে।

কট্টর ডানপন্থি বিক্ষোভকারী, যাদের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিত তীরে বসতি স্থাপন করা ইহুদিরাও রয়েছে, এই সব ছবি ও ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করেছে বলেও জানায় বিবিসি।

তারা ভিড় করে ত্রাণের লরি আটকে ত্রাণের বাক্সগুলো খুলছে এবং খাবারের প্যাকেট মাটিতে ছুড়ে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিচ্ছে। ওই ভিড়ের মধ্যে শিশুদেরও এসব করতে দেখা গেছে।

[224163]

ত্রাণ নষ্ট করা একজন বলেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র এভাবেই আমরা জিততে পারবো। একমাত্র এভাবেই আমরা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।

ওই ব্যক্তির মত একই ধারণা আরও অনেকে পোষণ করেন। তাদে যুক্তি, যতদিন পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হবে তত দিন পর্যন্ত গাজার বাসিন্দাদের কোনো ত্রাণই পাওয়া উচিত না। গাজায় ত্রাণ পাঠিয়ে শুধুমাত্র যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে।

বিবিসি জানায়, একটি ভিডিওতে কিশোর বয়সী বিক্ষোভকারীদের লুট করা একটি লরির মাথায় চেপে নাচতে এবং উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে।

অন্য একটি ভিডিওতে আটকে পড়া লরির মধ্যে একটিতে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।

আরও বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলি বিশৃঙ্খলাকারীরা অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেরুজালেমে ত্রাণ বোঝাই লরি জোর করে থামাচ্ছে এবং ওইসব ত্রাণ কোথায় যাচ্ছে চালকের কাছে তার প্রমাণ চাইছে। তাদের লক্ষ্য গাজার জন্য পাঠানো ত্রাণ আটকে দেওয়া ও নষ্ট করা।

ছবি ও ভিডিওগুলোতে তাদের সবার মুখই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে তারা কতটা বেপরোয়া এবং কারো কাছে নিজেদের কাজের জবাবদিহি করার নেই।

বিবিসি জানায়, পশ্চিম তীরে অন্তত দুইজন লরি চালককে টেনেহিঁচড়ে লরির কেবিন থেকে নামিয়ে মারধরও করা হয়েছে। অথচ, তাদের কেউই গাজার জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলেন না।

এ ধরণের ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ার কথা বলেছেন ফিলিস্তিনি লরি চালকরা।

আদেল আমরো নামে একজন বিবিসিকে বলেন, ক্রসিং পয়েন্টে যেতে আমি রীতিমত আতঙ্ক বোধ করছি। আমার মনে হচ্ছে আমাকে মেরে ফেলা হতে পারে।

আদেল ত্রাণ নয় বরং বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে পশ্চিম তীর থেকে গাজায় যাতায়াত করেন।

জর্ডান থেকে গাজার জন্য পাঠনো ত্রাণ নিয়ে আসা লরিতেও আক্রমণ করা হচ্ছে। জর্ডান থেকে পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলের উপর দিয়ে গাজায় পৌঁছাতে হয়।

আদেল বলেন, “আমরা এখন প্রধান সড়ক ছেড়ে পার্শ্ববর্তী সড়ক দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছি। যেসব রাস্তা প্রধান সড়ক থেকে বেশ খানিকটা দূরে। বসতি স্থাপনকারীরা যে রকম আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে তাতে আমরা রীতিমত ভীত হয়ে পড়েছি।”

তবে সব ইসরায়েলি এই কাজ সমর্থন করছেন না। বরং ইসরায়েলিদের একটি দল (দ্য গ্রুপ স্ট্যান্ডিং টুগেদার) উগ্র বিক্ষোভকারীদের থামাতে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উগ্র বিক্ষোভকারীদের গতিবিধির উপর নজর রাখছেন এবং মূল ক্রসিং পয়েন্টগুলোতে উপস্থিত থেকে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিতে আসা বিক্ষোভকারীদের আটকাতে চেষ্টা করছেন।

যেমন পশ্চিম তীরের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলে প্রবেশের তারকুমিয়া চেকপয়েন্টে ‘দ্য গ্রুপ স্ট্যান্ডিং টুগেদার’ এর সদস্যরা এখন নিয়মিত পাহারার ব্যবস্থা করেছে।

এই গ্রুপের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুফ পাতিশি। তিনি বিবিসিকে বলেন, গাজার মানুষরা অনাহারে রয়েছে এবং গাজায় অবশ্যই ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত।

ইসরায়েলি সমাজের উচিত খুবই স্পষ্ট ভাবে এবং আওয়াজ করে এটা বলা যে, আমরা এ ধরণের আচরণের বিরোধিতা করি।

আপনি তো জানেন, অনাহারে কাউকেই মরতে দেওয়া যাবে না এবং এখানে অনুমতি নেওয়ার কিছু নেই।

এই গ্রুপটি ইসরায়েলের ইহুদি ও আরবদের একত্রিত করেছে।

এমনই একজন ইসরায়েলি আরব নাসের ওদাৎ। ইসরায়েলের নগরী হাইফা থেকে তিনি তারকুমিয়া ক্রসিংয়ে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাহায্য করার আশায়। সাত মাসের বেশি সময় ধরে অসহায় হয়ে গাজা যুদ্ধ দেখার পর তিনি এখন এই যুদ্ধে নিজে কিছু করার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত।

তিনি বলেন, আমার নিজেকে এখন সক্ষম মনে হচ্ছে। এখন, শেষ পর্যন্ত, আমি সাহায্য করার মত কিছু কাজ পেয়েছি। ওইসব মানুষদের সাহায্য করার সুযোগ পেয়েছি যারা অনাহারে আছেন।

এমটিআই