বালুচ আর পাক-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ে ভারত কী করতে পারে?

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬, ১১:৪৪ এএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ স্পষ্টতই তুলে ধরল বালুচিস্তান এবং ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’-এর প্রসঙ্গ। ইন্দিরা গান্ধী থেকে তাঁর পুত্র রাজীব এবং সেখান থেকে মনমোহন ভারতের বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রীই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ইসলামাবাদ বিরোধী শক্তি এবং বালুচ-বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নীরবে সমর্থন করে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই এসব ক্ষেত্রে প্রকাশ্য সমর্থনের রাস্তায় হাঁটেননি। এমতাবস্থায় তিনটি প্রশ্ন উঠতেই পারে। 

কাশ্মীর উপত্যকায় পাকিস্তানের প্রকাশ্য মদতে ঘটে চলা নিরবচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসার দ্বারা কোণঠাসা হয়েই মোদী সম্ভবত ‘কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রাম’-কে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন।

নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এবং তার পরে স্বয়ং শরিফের বাড়ি সফর করে মোদী শুরু করেছিলেন তাঁর খেলা। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদের ক্রমাগত চিৎকার এবং এজেন্সি মারফত শ্রীনগর উপত্যকায় মুজাহিদদের নতুন নতুন দল পাঠানো চলতেই থাকলে তিনি প্রতি-আক্রমণের দিকেই এগোন। ভারতীয় সাংবাদিক সবীর ভৌমিক লিখেছেন,পাকিস্তানকে বন্ধু হিসেবে পেতে বাজপেয়ী ও মোদী দু’জনেই ঐকান্তিকভাবে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু বাজপেয়ী যেখানে কার্গিল-চ্যালেঞ্জের বিপরীতে একটা প্রচলিত নীতিকেই অনুসরণ করেছিলেন, সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানের স্থলসীমা ও আকাশসীমা অতিক্রম করতে নিষেধ করেছিলেন, সেখানে মোদী খানিকটা হলেও বুনো ওল-বাঘা তেঁতুল নীতি নিয়েছেন ।

মোদীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এমনটা চান। আর বিদেশ মন্ত্রকের চাইতে মোদীর প্রতিবেশী-সংক্রান্ত নীতিতে দোভালের যে অধিকতর রকমের প্রভাব রয়েছে, তা কোনও গোপন ব্যাপারও নয়। এটাও গোপন নয় যে, পাকিস্তানের ভুলের জায়গাগুলোতেই দোভাল কড়া আঘাত হানতে চান এবং এই কারণেই বালুচিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ক্রিয়াশীল বেশ কিছু ভারতীয় গোয়েন্দা সংগঠনের আস্থাও তিনি অর্জন করেছেন।
 
পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে পাকিস্তানের নিয়মিত কৌশলগত হুমকি ভারতের সামনে শ্রীনগর উপত্যকা বা অন্যত্র পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে খুব বেশি পছন্দের জায়গা খোলা রাখেনি। এমন ক্ষেত্রে ১৯৭১-এর মতো প্রথাগত যুদ্ধের কথা চিন্তার বাইরে। এমনকি, চিরাচরিত সামরিক কায়দায় সীমাবদ্ধ সীমান্ত সংঘাত ও গ্রহণীয় নয়। কারণ, এসব কাণ্ডে সংঘাত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা চিন্তার অতীত।

কিন্তু ভারত কি বালুচ অথবা পাকিস্তানি কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রকাশ্য মদত করতে পারে? এবং তার পরেও নৈতিকতার দোহাই দিয়ে নিজেকে সন্ত্রাসের শিকার হিসেবে বর্ণনা করতে পারে?

যেহেতু চীন-পাক ইকনোমিক করিডর শুরু হচ্ছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে এবং শেষ হচ্ছে বালুচিস্তানের উপকূল বরাবর (যেখানে চীন গোয়াদার বন্দরে অর্থ বিনিয়োগ করেছে), সেহেতু সেখানকার হুমকিপ্রদানকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি ভারতের মদত বেজিংকে চিন্তায় ফেলতে পারে। বিশেষ করে চীন যখন দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে জাপান, আমেরিকা এবং আসিয়ান প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের চুপিচুপি দল পাকানো নিয়ে অস্বস্তিতে।

কিন্তু এ নিয়ে চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বলেছে, পাক-কাশ্মীর এবং বালুচিস্তানে তার স্বার্থ বিঘ্নিত করলে সে মুখ বুজে সহ্য করবে না। বদলায় চীন যদি উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যাপক জঙ্গি মদত শুরু করে, তা হলে কী হবে?

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই