ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (১৮ আগস্ট) ঘোষণা করেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠকের আয়োজন শুরু করেছেন। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প এ তথ্য জানান।
ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি পুতিনকে ফোন করে আলোচনার প্রস্তুতি নেন। তিনি লিখেছেন, “বৈঠকগুলোর শেষে আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করি। প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু করি, যার স্থান এখনও নির্ধারিত হয়নি।”
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি নিজেও শিগগিরই পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তাঁর দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বনেতারা আশাবাদী।
সিএনএনকে এক সূত্র জানিয়েছে, পুতিন ইতিমধ্যে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন যে তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাজি আছেন।
হোয়াইট হাউসে দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলেনস্কি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে খুবই চমৎকার আলোচনা হয়েছে। আমরা স্পর্শকাতর সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি… তবে আমার মনে হয় সেরা আলোচনাটা এখনও বাকি আছে।”
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার প্রস্তাবে প্রথমে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে, পরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। জেলেনস্কির ভাষায়, “আমি শর্ত ছাড়াই যেকোনো ফর্ম্যাটে বৈঠকে প্রস্তুত। যুদ্ধ শেষের জন্য আমাদের নিঃশর্তভাবে বসতেই হবে।”
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ সোমবার রাতে নিশ্চিত করেছেন যে পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বৈঠক হতে পারে। তবে স্থান এখনও নির্ধারিত হয়নি।
[254868]
মের্জ বলেন, “ভালো প্রস্তুতি দরকার। পুতিন সত্যিই সাহস দেখাবেন কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে ইউরোপীয় অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনে ড্রোন উৎপাদনের পরিকল্পনা চলছে, যার কিছু যুক্তরাষ্ট্রও কিনবে। আগামী এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদ দেওয়া সম্ভব নয়, তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া হবে। এই ঘোষণা নিয়ে জেলেনস্কি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে ট্রাম্পের ভূমিকাকে প্রশংসা করেছেন।
ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, “এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধ থামতে পারে,” যদিও তিনি স্বীকার করেছেন বিষয়টি জটিল।
জার্মান চ্যান্সেলর মের্জও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে রাশিয়া ডনবাস অঞ্চল ছাড়তে প্রস্তুত হতে পারে, যা বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক শুধু যুদ্ধবিরতির নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী শান্তির সম্ভাবনা উন্মোচন করছে। শিগগিরই ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও পুতিনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বৈশ্বিক কূটনীতিতে বড় মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ মন্তব্য করেছেন, “ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়া সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে ইউরোপীয় নেতারাও আলোচনায় যুক্ত হবেন।”
ওএফ