বিশ্বজয়ী এক ইরানি তরুণীর গল্প

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০১৭, ১২:১৯ পিএম
লেইলা তার নির্মিত ব্রিজের উপর দাাঁড়িয়ে

ঢাকা: মাত্র ২৬ বছর বয়সেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লেইলা আরাঘিয়াঁ। মুসলিম নারীরা যে পিছিয়ে নেই তাই বুঝে দিয়েছেন ইরানী এই তরুণী। তেহরান শহরে পথচারীদের জন্য ‘তাবিয়াত ব্রিজ’ নির্মাণ করেন ইরানের এই আর্কিটেক্ট। তিনতলা এই ব্রিজ শুধু যাতায়াতের জন্য নয়। সাধারণ মানুষ যাতে বসে গল্প করতে পারেন বা ঘুরতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রয়েছে। এই অভিনব স্ট্রাকচারের জন্য দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার জিতে নিয়েছেন লেইলা। 

ভারতের কলকাতায় ‘ক্রেডাই ব্যাঙ্ক এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস’এর যৌথ উদ্যোগে আর্কিটেকচারাল কনভেনশনে উপস্থিত হয়েছিলেন লেইলা। সেখানে ভারতীয় গণমাধ্যম এবেলা কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘মুসলিম মেয়েরা শুধু মা হয়ে রান্নাঘরে বসে থাকে না। তারা পড়াশোনা করে নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত।’

নিচের তার সাক্ষাত কারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-

কলকাতায় এই প্রথম?

গত বছর গোয়ায় একটি কনভেনশনে এসেছিলাম। তবে কলকাতায় এই প্রথম। আপনাদের শহর এত সবুজ দেখে ভাল লাগল। খুব বেশি ঘোরার সময় পাইনি। তবে সিটি সেন্টার ওয়ান আর টু’এ গিয়েছিলাম। সিটি সেন্টার ওয়ানের স্ট্রাকচারটা খুব ভাল লেগেছে। অনেকটা খোলা জায়গা রয়েছে। তবে ট্রাফিকের দিকে থেকে আপনাদের শহর পুরো তেহরানের মতোই (হাসি...)।

আর্কিটেক্ট হওয়ার কথা কেন ভাবলেন?

হাইস্কুলে পড়ার সময়ে আমার মেজর ছিল অঙ্কে। সকলে ভেবেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা অ্যাকাডেমিক্‌স’এ যাব। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, আর্কিটেকচারে অনেক বেশি প্রাণ রয়েছে। 

খুব কম বয়সে আপনি তাবিয়াত ব্রিজ ডিজাইন করেছিলেন। সুযোগটা কীভাবে পেলেন?

আমার বিজনেস পার্টনারের সঙ্গে ২০০৫ সালে একটা ফার্ম খুলি। তখন আমার বয়স ২২। তার চার বছর পর এই ব্রিজটা ডিজাইন করার জন্যে একটা প্রতিযোগিতা হয়েছিল। আমাদের দেওয়া ডিজাইনটা জেতে। 

ব্রিজটা আপনার শহরে এখন একটা জনপ্রিয় পাবলিক স্পেস। ভাবনাটা কীভাবে এল?

একদিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখি, একটা বাড়ির সামনে কেউ পুরনো একটা কাউচ ফেলে রেখে গিয়েছে। আমরা সেটা তুলে পাশের একটা ছোট্ট ব্রিজে রেখে অনেকক্ষণবসেছিলাম। তখনই আমার মনে হয়, ব্রিজ শুধু পারাপারের জন্যে কেন হবে! দু’দণ্ড সেখানে বসলে হয়তো আশপাশটা আরও সুন্দরভাবে চোখে পড়বে। প্রতিযোগিতার কথা জানতে পেরেই এই গল্পটা আমার মনে পড়ে যায়। এর পিছনে আরেকটা বড় কারণও ছিল।

সেই কারণটা কী?

ব্রিজ তৈরি হয় গাড়ি চলাচলের কথা ভেবে। মানুষের কথা ভেবে নয়। বেশিরভাগ ব্রিজের ক্ষেত্রে যাতে ট্রাফিকের অসুবিধে না হয়, তার জন্য মানুষকে সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা কষ্ট করে যেতে হয়। কিন্তু সেটা হওয়া কি ভাল? আমার ডিজাইনটা এত জনপ্রিয় হয়েছে কারণ সেটা মানুষের কথা ভেবে তৈরি। 

ইরানের মেয়েদের ব্যপারে আমাদের ধারণা তৈরি হয়েছে পনাহি বা কিয়ারোস্তামির ছবি দেখে...

কিয়ারোস্তামির এমন কোনও ছবির কথা আমার মনে পড়ছে না যেখানে মেয়েদের খারাপ অবস্থা দেখানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, পনাহি বা কিয়ারোস্তামি ইরানের বিখ্যাত দু’জন চলচ্চিত্র পরিচালক।

অনেকে ভাবতেই পারেন আপনাকে আর্কিটেক্ট হতে অনেক স্ট্রাগ্‌ল করতে হয়েছে।

আমার আর্কিটেকচারের ক্লাসে যতজন ছেলে ছিল, তার চেয়ে মোটে ১০জন কম মেয়ে ছিল। বোধহয় এতেই আপনার উত্তরটা পেয়ে যাবেন। কোনও ছবি দেখে আপনাদের মনে হতেই পারে, মেয়েরা স্টেডিয়ামে যেতে পারেন না। (জাফর পনাহির ‘অফসাইড’ ছবির দিকে ইঙ্গিত করছিলেন)। সেটা সত্যি। কিন্তু আমি কোনওদিন স্টেডিয়ামে না গিয়েও যথেষ্ট সফল। কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু মেয়েরা শুধু মা হয়ে রান্নাঘরে বসে থাকে না। তারা পড়াশোনা করে নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। আমার পেশায় যে অসুবিধেগুলো হয়েছে, সেগুলো যে কোনও ছেলেরও হতো। তবে আমার একজন মেল পার্টনার ছিল। সে না থাকলে বাড়তি অসুবিধে হতো কি না বলতে পারছি না। আসলে আমি কোনও রকম রাজনৈতিক কথা বলতে চাই না। উইমেন’স ইস্যু খুবই জটিল বিষয়। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে বিয়ে, অধিকার, সম্পত্তি— অনেক কিছু চলে আসবে, যার সঙ্গে আমার পেশার কোনও যোগ নেই।

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই