ঈদ ঘনিয়ে এলেও রক্ত ঝরছে কাশ্মিরে

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০১৭, ০৬:২৭ এএম

ঢাকা: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে অভিযানকালে তিন তরুণ নিহতের কথা জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই পবিত্র মাস রমজানেও ভারত নিয়ন্ত্রিত একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগুরু রাজ্য জম্মু কাশ্মিরে রক্তপাতের বিরাম নেই। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। 

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ভোররাতে ভারতীয় সেনারা গুলি করে তিন কাশ্মিরি তরুণকে হত্যা করে। দক্ষিণ কাশ্মিরের পোলওয়ামা জেলার কাকাপোরা এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এসব তরুন লস্কর-ই-তাইবার স্থানীয় সদস্য বলে নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করে।

ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পোলওয়ামা এলাকায় এটা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রথম সফল অভিযান। ওই এলাকায় স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। এদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের শক্তিশালি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক রয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি), ১৮৩ সিআরপিএফ ব্যাটলিয়ন ও ৫০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ওই অভিযান চালায় বলে পত্রিকার খবরে উল্লেখ করা হয়। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মির উপত্যাকায় ভারত শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়।

গত সপ্তাহান্তে নিহত হয় ১১ ব্যক্তি। এদের মধ্যে, অনন্তনাগ জেলায় পুলিশ ভ্যানে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছয় পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে স্বাধীনতাকামীরা। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে কয়েকটি আলাদা বন্দুকযুদ্ধে তিন জন আন্দোলনকারী ও দুই বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

কাশ্মিরে রমাজানের সূচনা ঘটে স্বাধীনতাকামী নেতা সাবজার ভাটকে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভের ওপর সেনাবাহিনী গুলিতে এক তরুণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ওই ঘটনার জের ধরে বেশ কয়েকদিন উপত্যকায় কার্ফু চলে। রাজ্যে ইন্টারনের সেবা বিচ্ছিন্ন ও শাহী মসজিদ মুসল্লিদের নামাজ আদায় বন্ধ করে দেয়া হয়।

গত ১৪ জুন একযোগে কয়েকটি জায়গায় সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা হলে নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ সদস্য আহত হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা অভিযান শুরু করলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। গত ১৬ জুন নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে স্বাধীনতাকামী জুনাইদ মাতু নিহত হয়। এর জেরে নিহতের নিজ শহর কুলগামে কর্তৃপক্ষ কার্ফু জারি করে। কিন্তু কার্ফু উপেক্ষা করে মাতুর জানাযায় অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ।

কাশ্মিরের বর্তমান ডেমক্রেটিক ফ্রিডম পার্টি (ডিএফপি)’র চেয়ারম্যান শাবির আহমদ বলেছেন, ভারতীয় নেতৃত্ব কাশ্মিরকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় নেতৃবৃন্দ গোয়ার্তুমি করছে এবং এই অঞ্চলকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’

উপত্যকাজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে শাহ বলেন, এই পবিত্র রমজান মাসেও নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে তা দুঃখজনক। অন্যদিকে, কাশ্মিরের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা মিরওয়াজ ওমর ফারুক বলেন, রমজান মাসে আগে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি। আর কতদিন ভারত সরকার কাশ্মিরের বাস্তবতা অস্বীকার করে চলবে — সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

গত বছর ৮ জুলাই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মিরের জনপ্রিয় নেতা বুরহান ওয়ানিকে হত্যার পর থেকে দিল্লি’র শাসনের বিরুদ্ধে জম্মু ও কাশ্মির উত্তাল হয়ে আছে। তখন থেকে একের পর এক বিক্ষোভ ও রক্তপাত চলছে গোটা উপত্যকায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা