দেবী দূর্গাকে যৌনকর্মী বলে বিপাকে অধ্যাপক!

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭, ১০:৫৯ পিএম

ঢাকা: সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্শীয় উৎসব হলো দূর্গাপূজা। আর সেই দূর্গাকে যৌনকর্মী বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপমানজনক পোস্ট করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তারই সহকর্মী।

আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- ঘটনাটি ঘটেছে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে এবং যে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ লোক হিন্দু। আর অভিযুক্ত অধ্যাপকের নাম কেদার মন্ডল। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। এদিকে কেদার মন্ডল নামে ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-ও।

যদিও ওই শিক্ষক বিতর্কিত পোস্টটি ডিলিট করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। কিন্তু ততক্ষণে ঘটনা যা ঘটার তা ঘটে গেছে। তার সেই পোস্টকে ঘিরে আসন্ন দূর্গাপূজার আগে সরগরম হয়ে উঠেছে দিল্লি।

কিন্তু ঠিক কী লিখে আর কেন সহকর্মী ও ছাত্রদের এই তোপের মুখে পড়েছেন অধ্যাপক কেদার মন্ডল? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দয়াল সিং কলেজের অধ্যাপক কেদার মন্ডল শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভারতের মিথোলজি অনুসারে দূর্গা একজন যৌনকর্মী- তার ভাষায় ‘ভেরি সেক্সি প্রস্টিটিউট।’ লিখে পোস্ট করেন।

দূর্গাপূজার ঠিক আগে দেবীকে এভাবে অপমান করে তিনি আসলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে চাইছেন- এই অভিযোগে পরদিনই তার বিরুদ্ধে দিল্লির লোদি রোড পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন এনডিটিএফ।

সংগঠনের সভাপতি এ কে বাগি বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রথমে ওই শিক্ষকের মানসিক চিকিৎসা দরকার। খুব সস্তা প্রচার পাওয়ার লক্ষ্যেই তিনি এ ধরণের আপত্তিকর ও অনুভূতিতে আঘাত লাগার মতো কথাবার্তা লিখেছেন।’

‘আগেও তিনি এধরণের পোস্ট করেছেন, তবে এবার তিনি সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন এবং দেশের সাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিষিয়ে দেয়ার জন্যই এ কাজ করেছেন বলে আমাদের ধারণা।’

দিল্লি পুলিশ সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের কোন কোন ধারায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে চার্জ আনা যায়, সেটা তারা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-ও দাবি তুলেছে অধ্যাপক মন্ডলকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে, আলাদাভাবে সেই একই দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস সমর্থক ছাত্ররাও।

তিনি নিজে অবশ্য এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন, পোস্টটি ডিলিট করে দিলেও কোননো ফোন ধরছেন না বা এসএসএসেরও জবাব দিচ্ছেন না। এদিকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে বলে মানলেও তার পোস্টটিকে সমর্থন করছেন না দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থি শিক্ষকরাও।

ডেমোক্র্যাটিক টিচার্স ফ্রন্টের সভাপতি শাশ্বতী মজুমদার বিবিসিকে বলেন, ‘ওই শিক্ষক যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। ফলে মানুষ অভিযোগ করবেন এটা খুব স্বাভাবিক। আপনি নিশ্চয় দেখেছেন উনি কী লিখেছেন, ওতে আমরা কিছুতেই সায় দিতে পারি না।

ঘটনা হল, দেবী দূর্গাকে যৌনকর্মী বলা ঠিক হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে ভারতের পার্লামেন্টে খোলাখুলি বিতর্ক হয়েছিল গত বছরেই। ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সেখানে জেএনইউ-র তফসিলি জাতিভুক্ত ছাত্রদের একটি ফেসবুক পেজ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তারা বলছে, ফর্সা সুন্দরী নারী দূর্গা কীভাবে কৃষ্ণাঙ্গ আদিবাসীদের ছলেবলে হত্যা করছে - দূর্গাপূজা না কি তারই উৎসব। আরো বলা হচ্ছে, অসুর নিধনে দেবতারা নাকি দূর্গা নামে এক যৌনকর্মীকে ভাড়া করেছিলেন।’

দিল্লিতে অধ্যাপক কেদার মন্ডলও দূর্গার বর্ণনা করেছিলেন অনেকটা একই ভঙ্গীতে। কিন্তু ভারতীয় পুরাণতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বিবিসিকে বলেন, এটা আসলে পুরাণের খন্ডিত ও বিকৃত ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।

‘রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণই তো আমাদের মিথোলজি। তো সেখানে এক জায়গায় আছে শুম্ভ-নিশুম্ভকে আকৃষ্ট করতে দেবী দূর্গা মোহিনী রূপ ধারণ করেন। কিন্তু সেই মায়াবী রূপও তো আসলে তাদের হত্যা করতেই - এখানে আমি তো অন্তত কোনও যৌনকর্মীর রেফারেন্স পাই না।’

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক যেভাবে ও যে ভাষায় তিনি দেবী দূর্গাকে আক্রমণ করেছেন, তাতে ভারতে যারা সব সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেন তারাও এখন তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। সূত্র বিবিসি বাংলা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম