পুরনো শত্রু রাশিয়া ও পাকিস্তান এখন বন্ধু

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০১৮, ১০:৫৭ পিএম

ঢাকা: ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরিতে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে প্রথমবারের মতো যৌথ মহড়ায় অংশ নিতে পাকিস্তানে পৌঁছায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

এই রাশিয়া এখনো ভারতেরও প্রধান মিত্র বলে বিশ্বে পরিচিত।

মস্কো আর ইসলামাবাদের এই দহরম মহরম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে ভারতীয় ক্ষমতাসীনরা। যদিও রাশিয়া নয়াদিল্লীকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে, শুধু মাত্র বিতর্কিত এলাকায় মহড়ায় অংশ নেবে তারা।

কিছু সময়ের জন্য বিষয়টা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু আমরা যদি রাশিয়া ও পাকিস্তানের সম্পর্কের সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতার উপর নজর দেই, তাহলে দেখা যাবে শীতল যুদ্ধকালের দুই শত্রু দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়ে গেছে।

পুরনো বন্ধু রাশিয়াকে হারানোর ব্যাপারে ভারত হয়তো এখনও ততটা উদ্বিগ্ন নয়, কিন্তু ২০১৬ সালে গোয়াতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে যে, মস্কো আর ভারতের চোখ দিয়ে পাকিস্তানকে দেখে না, যেমনটা শীতল যুদ্ধের সময় চলে আসছিল যখন ইসলামাবাদ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত বন্ধু ।

গোয়াতে রাশিয়া ও চীনের সহায়তায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করার চেষ্টা করেছিল ভারত, কিন্তু দেশ দু’টি রাজি হয়নি। চীন যে রাজি হবে না, এটা ধারণা করা হয়েছিল, কিন্তু রাশিয়ার ব্যাপারটি ছিল অপ্রত্যাশিত। মস্কোর প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা গেছে যে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সাম্প্রতিককালে বদলে গেছে।

রাশিয়া-পাকিস্তান সম্পর্ক যে আগের চেয়ে ভালো সেটা রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির রিপোর্টেও উঠে এসেছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার সামরিক প্রতিনিধি দল যখন গত বছর এশিয়ার দেশটির উপজাতীয় এলাকায় সফর করে, তখন দেখা গেছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বিভিন্ন সাইনবোর্ডে রাশিয়ান ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি ইসলামাবাদের কাছাকাছি মহাসড়কেও রাশিয়ান ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে এমনকি পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরে একজন অনারারি কনসালও নিয়োগ করেছে।

পর্যবেক্ষকদের কাছে এগুলো শুধু পাকিস্তান-রাশিয়া সুসম্পর্কের বিষয় নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

যে আফগানিস্তানে ১৯৭৯-৮৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে থেকে মুজাহিদীনদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য পশ্চিমাদের সহায়তা করেছিল পাকিস্তান, সেই আফগানিস্তানই এখন পাকিস্তানকে রাশিয়ানদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কার্যত, কৌশলগত কারণে আফগানিস্তানের তালেবানদের সহায়তা দেয়ার কারণে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন খুবই খারাপ পর্যায়ে রয়েছে।

রাশিয়া ও পাকিস্তানের সুসম্পর্কের একটা বড় কারণ আফগানিস্তানের সঙ্কট। দুই দেশেরই তালেবানদের সাথে স্বার্থ রয়েছে এবং উভয়েই তারা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিকে সন্দেহের চোখে দেখে।

তালেবানদের স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে রাশিয়াকে সমর্থন করে পাকিস্তান। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য যে কোন প্রচেষ্টায় সব পক্ষকেই অংশ নিতে হবে- ওয়াশিংটনের এ ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ইসলামাবাদের পক্ষে রয়েছে মস্কো।

বাস্তবতা হলো, আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের যুদ্ধ জয়ের সম্ভাবনা প্রতিদিনই কমছে। আর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ দেশটিতে আমেরিকান প্রভাব কমাতে রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো আরও বেশি জড়িয়ে পড়ছে। পাকিস্তান এ অবস্থায় সেই পক্ষের সাথেই থাকছে, যেখানে থাকা তার জন্য নিরাপদ মনে হচ্ছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতি প্রণেতাদের কাছে আফগানিস্তানকে বাদ দেয়াটা কঠিন, যেহেতু এটা একটা প্রতিবেশী। তবে কাবুলে ভারতের মতো শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সব সময় শক্ত অবস্থানে থাকবে তারা। এবং তালেবানদের সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে যখন রাশিয়ার মতো শক্তিকে পাশে পাচ্ছে পাকিস্তান, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের ক্রোধের শিকার হওয়ার ভয়টাও তাদের অনেক কমে যাচ্ছে।

রাশিয়ার দিক থেকে তালেবানদের সমর্থন দেয়ার কৌশলের কারণ শুধু আফগানিস্তানের মার্কিন সেনাদের চাপের মধ্যে রাখা নয়। বরং আফগানিস্তানসহ সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোকে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের পদচারণা থেকে মুক্ত রাখাও একটা উদ্দেশ্য রাশিয়ার। বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ার পর আইএস জঙ্গিরা এ সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো সামরিকভাবে এখনও আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করেনি রাশিয়া। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি সেটা ঘটেও, ইসলামাবাদের সাথে মস্কোর সামরিক সহযোগিতার কারণে আফগানিস্তানের খেলাটার চিত্র পুরো বদলে যাবে।

সোনালীনিউজ/আতা