রাজপরিবারেই বিরোধিতার মুখে সৌদি যুবরাজ

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম

ঢাকা : সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে এবার খোদ রাজপরিবারের সদস্যদের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক খুনের ঘটনায় এমনিতেই পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ ছিল দেশটির ওপর। অভিযোগের তীর বার বার যুবরাজের দিকে উঠছিল। এবার রাজপরিবারের কিছু সদস্যও তার বিরোধিতায় সরব হচ্ছেন। খবর আলজাজিরা।

আল-সৌদ পরিবারের ওই সদস্যরা যুবরাজের পরবর্তী বাদশা হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে রাজপ্রাসাদ সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে। রাজপরিবারের অনেকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রশ্নে পরিবর্তন দেখতে চান। তবে ৮২ বছর বয়সী বাদশা সালমান বেঁচে থাকা অবস্থায় এটি সম্ভব নয় বলেও জানান তারা।

যুবরাজ মোহাম্মদ বাদশার প্রিয়পুত্র এ কথা সবারই জানা। খাশোগি ইস্যুতে ঘরে-বাইরে সর্বত্র সমালোচনার মুখে থাকা যুবরাজকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠলেও বাদশাহ তাতে কান দেবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রধান যুবরাজই সিংহাসনের উত্তরাধিকার হন। কিন্তু রাজপরিবারের সদস্যরা এখন বাদশার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ৭৬ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে সিংহাসনে বসাতে আগ্রহী। বাদশা হলে রাজপরিবার ছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সমর্থন তিনি পাবেন।

আড়াই মাস বিদেশে কাটিয়ে প্রিন্স আহমেদ গত মাসে রিয়াদে ফেরেন। লন্ডনে তার বাসভবনের সামনে সৌদ সাম্রাজ্যের পতন চেয়ে বিক্ষোভকারীদের স্লোগানের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনাও করেছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির যে তিন জ্যেষ্ঠ সদস্য যুবরাজ মোহাম্মদের বিরোধিতা করেছিলেন, আহমেদ তাদের একজন ছিলেন।

এ বিষয়ে প্রিন্স আহমেদ কিংবা তার প্রতিনিধিদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সৌদ বংশে কয়েকশ প্রিন্স আছে। ইউরোপীয় রাজপরিবারগুলোর মতো এখানে রাজার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিংহাসনের উত্তরাধিকার হতে পারেন না। সৌদি আরবের ঐতিহ্য অনুযায়ী, বাদশা এবং পরিবারের বিভিন্ন শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্যরা মিলে তাদের দৃষ্টিতে সিংহাসনের জন্য সবচেয়ে বেশি যোগ্য ব্যক্তিকেই উত্তরাধিকার মনোনীত করেন।

তবে ওই মনোনয়নই শেষ কথা নয়। বাদশার মৃত্যু কিংবা তিনি রাজকাজ পরিচালনায় অক্ষম হলে ৩৪ সদস্যের কাউন্সিল নতুন বাদশা ঠিক করেন। ঠিক করে রাখা উত্তরাধিকারীর বাদশা হতে হলেও কাউন্সিলের সম্মতি প্রয়োজন। মোহাম্মদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রভাবশালীরা এখন সেই ক্ষণেরই অপেক্ষায় রয়েছেন।

গত বছর ক্ষমতা পেয়েই শত শত বছর ধরে চলা আল সৌদি শাসনব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভগুলোকে ভেঙেচুরে ফেলেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ। তার এসব কর্মকাণ্ডে পরিবার, ধর্মীয় নেতা, সম্প্রদায় ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারগুলোয় ভাঙন ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সৌদি উপদেষ্টাদের আভাস দিয়েছেন সিংহাসনে আরোহণের ব্যাপারে আহমেদকে সমর্থন দিতে পারেন তারা।

তিনি গত ৪০ বছর ধরে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ক্ষমতায় গেলে মোহাম্মদ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের যে কর্মসূচি শুরু করেছেন তা অব্যাহত রাখা এবং  সামরিক অস্ত্র কেনাবেচার চুক্তি বহাল রাখার পাশাপাশি পরিবারের একতা পুনরুদ্ধার করবেন আহমেদ; এই নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান।

এদিকে খাশোগির মৃত্যুর পর গত সোমবার প্রথমবার প্রকাশ্যে ভাষণ দেন সৌদি বাদশাহ। দীর্ঘ ভাষণে নিজ দেশের বিচারব্যবস্থার সাফাই গাইলেও খাশোগি ইস্যুতে কোনো কথা বলেননি তিনি। ভাষণে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সৌদি কখনো পিছপা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। যদিও খাশোগি হত্যার বিচার বা তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কিছু ছিল না তার বক্তব্যে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই