কি ঘটতে যাচ্ছে ব্রেক্সিটে

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০১৮, ০৮:৪৯ পিএম

ঢাকা : ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশের নেতারা রোববার (২৫ নভেম্বর) ব্রাসেলসে জরুরি বৈঠকে বসবেন সংস্থাটি থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগের এই ঘটনাকে ব্রেক্সিট বলে অভিহিত করা হচ্ছে।

বেশ কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষ জটিল ও দুরূহ দর কষাকষির পর এই বিষয়ে চুক্তির যে সব খসড়া তৈরি করেছেন তাতে সব দেশের নেতারা সম্মত আছেন কিনা তাই নিয়ে ভোটাভুটি হবে এই বৈঠকে। ২৯ মার্চ, ২০১৯ তারিখে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ করবে করার কথা রয়েছে ব্রিটেনের। ব্রাসেলসের এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের লক্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে একটি বিশ্লেষণ এখানে দেয়া হলো।

কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে?

এই চুক্তিতে দু'টি ভিন্ন দলিলের খসড়া রয়েছে। গত দুই সপ্তাহের আলোচনায় এগুলো চূড়ান্ত করেছে ব্রিটেন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। প্রথম দলিলটি হচ্ছে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার চুক্তি, যাকে বলা হচ্ছে 'ডিভোর্স ডিল'। জুন ২০১৬-এর ঐতিহাসিক গণভোটের পর ব্রেক্সিটের শর্তগুলো নির্ধারণ করা হয় এই দলিলে। ওই সময় দেখা যায় ৫২ শতাংশ মানুষ চায় ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে এই সংস্থায় যোগ দিয়েছিল।

রোববার যে দু'টি দলিল নিয়ে আলোচনা হবে তার মধ্যে ৫৮৫ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এই দলিলটি বেশি বড়।

এই আইনি দলিলে নাগরিক অধিকার, তথাকথিত 'ডিভোর্স সেটেলমেন্ট' ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ও দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের মধ্যে দুর্ভেদ্য সীমান্ত স্থাপন ঠেকানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ব্রিটেনে কতদিন ধরে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত পালাবদল চলবে সেটি নিয়েও এতে আলোচনা করা হয়েছে। এই সময়ে ব্রিটেন ও ইইউয়ের মধ্যে সম্পর্কে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। দুই পক্ষই ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তির সম্পন্ন করবে।

মার্চ ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এই পালাবদলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দুই পক্ষের সম্পর্কের রূপান্তরের এই সময় রোববারের সম্মেলনে পরিবর্তন করা হতে পারে।

দ্বিতীয় যে দলিলটি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে, সেটি একটি রাজনৈতিক ঘোষণা। এটা কোনও আইনি দলিল নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কের বিভিন্ন শর্তের প্রস্তাব রাখা হয়েছে ২৬ পৃষ্ঠার এই দলিলে।

ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্কের লক্ষ্য, সমন্বিত পররাষ্ট্র নীতি, অপরাধের বিচার, আইন প্রয়োগ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এতে।

রোববার কী হবে?

ইইউয়ের সদস্য দেশগুলোর নেতারা দু'টি দলিলের বিষয়েই ভোট দিবেন।

সম্মেলনের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই কয়েকটি রাষ্ট্র ব্রিটেনের প্রত্যাহার চুক্তির বিষয়ে বিভিন্ন আপত্তি জানিয়ে আসছিল। ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের জলসীমায় মাছ ধরার বিধিনিষেধের বিষয়েও তাদের আপত্তি রয়েছে।

ইউরোপিয়রা এখন ব্রিটেনের চারপাশের সমুদ্রে যেভাবে মাছ ধরতে পারে, ভবিষ্যতেও তারা একই সুবিধা চায়।

এদিকে, জিব্রাল্টার প্রনালির বিষয়ে আশ্বস্ত করা না হলে স্পেন এই সম্মেলনই বর্জনের হুমকি দিয়েছে। তবে, দৃশ্যত শনিবার বিষয়টির সুরাহা করা হয়েছে।

চুক্তি হলেই কি ব্রেক্সিট শেষ হয়ে যাবে?

না, আরও বহুদিন চলবে এই প্রক্রিয়া। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেকে এখনও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছ থেকে এই চুক্তির অনুমোদন নিতে হবে। হাউজ অফ কমন্সের ৬৫০ সদস্যের বেশিরভাগকে এটিতে সম্মতি দিতে রাজি করানোটা কঠিন হবে।

নিজের দেশেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই খসড়া চুক্তির সমালোচনা করছে সব পক্ষ। মে'র কজারভেটিভ দলের ৩১৫ জন এমপির অনেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা করবেন। বিরোধী দলেও একই অবস্থা, সেটা বলাই বাহুল্য।

দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি)-ও ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে। মে'র জোট সরকারে তাদের দশ জন এমপি রয়েছে। শনিবারও তারা দুই আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবটি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে।

ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে।

তারপর কী হবে?

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যদি এই চুক্তির অনুমোদন দেয়ও, তাহলে জানুয়ারি মাসে এ সংক্রান্ত নতুন আইনের প্রস্তাব দেয়া হবে। সেই প্রস্তাব পার্লামেন্টে অনুমোদন দেয়া হলে তা আইন হিসেবে গন্য করা হবে। সেই আইনকে আবার ২৯ মার্চের ব্রেক্সিট ডে'র আগে স্বীকৃতি পেতে হবে ইইউয়ের কাছ থেকে।

তবে এখন পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে ব্রিটেনের এমপিরা এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনাই বেশি। তখন পরিস্থিতি হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। জেরেমি করবিনের লেবার পার্টি সম্ভবত যত দ্রুত সম্ভব একটা সাধারণ নির্বাচন দেয়ার দাবী জানাতে পারে।

কনজারভেটিভরা টেরেসা মেকে দলের প্রধানের পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করতে পারে। অথবা এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য দ্বিতীয়বার পার্লামেন্টে পেশ করার আগে এতে উল্লেখযোগ্য সংশোধনের চেষ্টা করতে পারেন তারা।

একই সময়ে, যারা ব্রেক্সিটের বিষয়ে দ্বিতীয় বার গণভোটের দাবী জানিয়ে আসছেন, তারা আরও জোরেশোরে আন্দোলন শুরু করতে পারেন। এবার তারা  ব্রিটেনকে ইইউয়ের অন্তর্ভুক্ত রাখার পক্ষেই ভোট দেয়ারও সুযোগ চাইবেন।

এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার ভোটাভুটিতে রাজনীতিবিদ ও জনগণের রুচি হবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মার্চ মাসে ইইউ ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে ব্রিটেনের। ব্রিটেনের নেতারা এ নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে পারবেন না।  ব্রিটেন যদি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই ওই তারিখ এসে যায় তাহলেও ব্রিটেনকে ইইউ ত্যাগ করতেই হবে।

তথাকথিত 'নো-ডিল ব্রেক্সিট' বা কোনও চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ করার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সব পক্ষই চাইছে এটা যেন না হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই