আসপিয়ার দুঃখ ঘুচাতে পারেন কেবল প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১, ০৭:০১ পিএম

ঢাকা: পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাচ্ছেন আসপিয়া ইসলাম—এই খবরে পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মনে খুশির জোয়ার। আসপিয়া চাকরিতে যোগ দেবেন শিগগিরই। এরপর অভাব ঘুচে সচ্ছলতার মুখ দেখবে পরিবার। কিন্তু হঠাৎ জানা যায়, চাকরিটা হচ্ছে না। 

এই খবর পেয়ে আসপিয়া দ্রুত ছুটে যান ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে। জানতে চান, সব ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেন তার চাকরি হবে না। ডিআইজি জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেওয়ার আইন নেই। এরপর ভাঙা মন নিয়ে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ লাইন্সের সামনে বসে থাকেন আসপিয়া।

বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।

তার চাকরি হতে পারে কিনা এ বিষয়ে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম আকতারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক মানবিক। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিলে তবে তাকে পুলিশে নেয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, আসপিয়ার জন্য আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। আসপিয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মেধাবী। তাকে পুলিশ বিভাগে পাওয়া গেলে  ভালো হতো। কিন্তু পুলিশের চাকরিতে নিয়োগ হয় জেলা ভিত্তিক। অবশ্যই জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে-এমন বিধান রয়েছে। কিন্তু আসপিয়ার জমি না থাকায় তাকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক মানবিক। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিলে তবে তাকে পুলিশে নেয়া যেতে পারে।

জানা গেছে, সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেছেন আসপিয়া ইসলাম। ১৫ বছর ধরে উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের একজনের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকছে তার পরিবার। আসপিয়ার বাবা সফিকুল ইসলাম মারা গেছেন। পরিবারে তারা তিন বোন, এক ভাই ও মা। তার ভাই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার আয় দিয়েই চলে সংসার।

আসপিয়া জানান, বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে লোক নিতে সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।

২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হন। এরপর ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।

২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ আসপিয়া। সবশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আসপিয়া।

চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগে ভূমিহীন হওয়ায় (স্থায়ী ঠিকানা না থাকায়) আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

আসপিয়া বলেন, ‘আমি যোগ্যতাবলে সাতটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে হিজলা থানার ওসি জানান, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনো জমি নেই। আমরা একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বাস করছি। জমি নেই বলে আমার চাকরি হবে না এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। বৃহস্পতিবারে দুপুরে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়ে তাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করি। কিন্তু আইনে বাধা থাকায় কিছু করার নেই বলে জানান তিনি।’

সোনালীনিউজ/আইএ