আপনার মনের অবস্থা আবহাওয়ার সাথে যেভাবে বদলায়

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০১৬, ০৪:৫৩ পিএম

সোনালীনিউজ ডেস্ক

বহাওয়ার সাথে সাথে বদলায় আমাদের মনের অবস্থা, প্রভাব পড়ে শারীরিক অবস্থায়ও। অবাক হচ্ছেন? মনে করে দেখুন তো, ঝুম বৃষ্টিটা কেমন মন ভাল করে দিয়েছিল গতবর্ষায়? সকালের ঝরঝরে রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ দেখে কেমন খুশী হয়ে গিয়েছিলেন? আবার ঠান্ডা লেগে গেল যখন গরম বাড়তে থাকলো। তাই না? হ্যাঁ, এমনই প্রভাব ফেলে প্রকৃতি আমাদের উপর। শুধু এগুলোই নয় বরং এর প্রভাব হয় আরও বিস্তর, বিচিত্র। আসুন জেনে নিই, কি কি উপায়ে পরিবেশ প্রভাব বিস্তার করে আমাদের জীবনে।
 
ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘুম ভাল হয়
মিষ্টি স্বপ্নরা ভিড় করে একটি শান্ত নিবিড় ঘুমে। আর সেই নিবিড় আবহাওয়া পাওয়া যায় ঠান্ডা পরিবেশে। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নাটালাই ডটোভিচ বলেন, ঘুমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল ৬০ থেকে ৬৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট। কারণ শরীরের তাপমাত্রা কমে এলে তা মস্তিষ্কে ঘুমের বার্তা পাঠায়।
আবার বিপরীতভাবে আশ্চর্য হলেও সত্যি গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘুম ভাল হয় না। বজ্রপাত আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে কারণ তা শব্দ এবং আলো তৈরি করে।
 
তীব্র আবহাওয়া শরীরকে অসুস্থ করে
যেসব এলাকায় ঘন ঘন ঝড় হয়, হ্যারিকেন বা টর্নেডোর প্রবণতা আছে সেসব এলাকায় মানুষের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার সম্ভাবনা বেশী থাকে। ঝড়ের তীব্রতা বৈষয়িক ক্ষতির পাশাপাশি রেখে যায় অনেক মানসিক, চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, ক্লান্তি। যা অনেক দিন যাবত নিয়ন্ত্রণ করে মনের অবস্থা। এর সাথেই তাল মিলিয়ে হতে পারে নানান রোগ বালাই।
 
বৃষ্টির কারণে খুবই বাজে এলার্জি হয়
সব পুরাতন জীর্ণ নোংরা ধুয়ে যায় বৃষ্টিতে। কিন্তু বর্ষায় বাতাসের তীব্রতা থাকে সবসময়। বাতাসের সাথে দ্রুত ছড়ায় রোগ-জীবাণু। আর্দ্র আবহাওয়ায় তা থেকে হতে পারে এলার্জি। যাদের এলার্জির প্রবণতা আছে তারা জানেন, আবহাওয়া বদলানোর সাথে সাথে কিভাবে ত্বকের ওপর তার প্রভাব পড়ে। আর্দ্র, ভেজা আবহাওয়ায় ত্বকে ফাংগাস হতে পারে, হতে পারে বাজে ধরনের এলার্জি।
 
রৌদ্রজ্জ্বল দিন মন ভাল করে দেয়
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালেয়ের গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মানুষ অন্তত ৩০ মিনিট বাইরের চমৎকার আবহাওয়ায় কাটায় তাদের মন অনেক ফুরফুরে থাকে। রৌদ্রোজ্জ্বল ঝলমলে দিন মনের মাঝেও আনন্দ এনে দেয়। নিজেই খেয়াল করে দেখুন। অলস ঘুম কাটিয়ে উঠে গেছেন যেদিন, বেড়িয়েছেন জগিং করতে। বাইরে বেরিয়ে আলোকোজ্জল আবহাওয়া দেখতেই কিন্তু মুখে ফুটে উঠবে হাসি।
 
শীত মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে
Seasonal effective disorder, একটি বিষণ্ণতা সম্পর্কিত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এটা প্রায়ই হয় শীতের সময় যখন দিন থেকে ছোট আর রাত বড়। বিশেষজ্ঞের মতে, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ১০ মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্রেশন সেন্টারের এসোসিয়েট ডিরেক্টর মিশেল রিবা বলেন, যেসব মানুষের ক্ষেত্রে এটা প্যাটার্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে তারা প্রতিবছরই শীতে দুঃখবোধ করেন, উদ্বিগ্ন হয়ে যান অথবা মেজাজ পরিবর্তন হতেই থাকে, তাদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ।
 
তীব্র তাপ স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ায়
তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডিহাইড্রেশন এবং হিট স্ট্রোক উভয়ই আপনার আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে, মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে স্থায়ীভাবে।
 
গ্রীষ্মে রক্তচাপ কম থাকে
গবেষণায় দেখা গেছে, শীতের সময় রক্ত চাপ ওঠানামা করে বেশী। গ্রীষ্মে বরং স্থির থাকে, নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওয়েদার চ্যানেলের রিপোর্টে করা তথ্যে এর কারণ হিসেবে বলা হয়, কম তাপমাত্রা রক্তের কোষগুলোকে সংকুচিত করে যা রক্তের চাপে প্রভাব ফেলে, বিচ্যুতি তৈরি করে।
 
শীতে পূর্বস্মৃতি বেশী মনে পড়ে
কখনো কি খেয়াল করেছেন শীতের সময় ফেলা আসা সময়ের স্মৃতি বেশী মাত্রায় তাড়িত করে আপনাকে। হ্যাঁ, শুধু আপনাকেই নয়, বিশ্বব্যাপী মানুষ শীতার্ত আবহাওয়ায় ভোগে নস্টালজিয়ায়। পুরোনো সুখময় দিনের কথা মনে করাও মন খারাপ হয়ে যেতে পারে আপনার।
 
বৃষ্টির পূর্ব মূহুর্ত
বৃষ্টি হয়ত আসবে, বাতাস বইছে। হালকা ঠান্ডা। এই আবহাওয়া মানুষের মাঝে উদাসীন ভাব তৈরী করে। একা একা হাঁটতে ভাল লাগে, গল্পের বই পড়তে বা কবিতা আবৃত্তি করতে ভাল লাগে। ভাল লাগে গান শুনতে। আপনি যে মেজাজেই থাকুন না কেন, এই আবহাওয়া যাদুর মত প্রভাব ফেলে যায় মনে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন