গর্ভপাতের পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর উপায়

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২১, ০৩:১৭ পিএম

ঢাকা: নারী জীবনের পরম আকাঙ্ক্ষা হলো মা হওয়া। যারা মা হতে চাচ্ছেন তাদের অনেকেরই বারবার গর্ভপাত হওয়াতে নিদারুণ হতাশা ও মানসিক বিপর্যয়ে ভুগছেন। ২০ সপ্তাহের পূর্বেই গর্ভাবস্থার বিনাশ হওয়াকে গর্ভপাত বলে। ১০ থেকে ২০ শতাংশ গর্ভাবস্থার চূড়ান্ত পরিণতি হলো গর্ভপাত।

চিকিৎসকদের মতে, গর্ভপাতের পর আবার গর্ভধারণ করতে চাইলে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। গবেষণায় অপেক্ষার জন্য ক্লিনিক্যাল কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অধিকাংশ চিকিৎসক এই পরামর্শ দেন যে, পুনরায় গর্ভধারণের পূর্বে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্কটল্যান্ডে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব আবিরডিনের অবস্টেট্রিক এপিডেমিওলজির সিনিয়র লেকচারার সোহিনী ভট্টাচার্যও এমনটা মনে করেন।

গর্ভপাতের পর শরীরের অবস্থা
গর্ভপাতের পর নারীদের শরীর নরমাল ডেলিভারির মতোই আচরণ করে থাকে। এসময় প্রজনন হরমোনের হ্রাসবৃদ্ধি হয়। এর ফলে দুয়েক দিন বমিভাব, সপ্তাহখানেক তলপেটে ব্যথা, দুই সপ্তাহ থেকে মাসখানেক প্রজনন অঙ্গে রক্তক্ষরণ, কয়েক সপ্তাহ বিষণ্নতা এবং গর্ভাবস্থার স্থায়িত্ব চার সপ্তাহের বেশি হলে স্তনে দুধও আসতে পারে।

গর্ভপাতের পর যখন আবার গর্ভবতী হওয়া সম্ভব
সাধারণত কোনো নারীর গর্ভপাত হলেও তিনি ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় গর্ভবতী হতে সক্ষম হবেন। আবার কবে গর্ভধারণ হবে তা নির্ধারণের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হলো পরবর্তী ওভুলেশন। পরিণত ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াই হলো ওভুলেশন। শুক্রাণু দ্বারা এই ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে গর্ভধারণ হয়। গর্ভপাতের পর ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে নারীর মাসিক চক্র স্বাভাবিকে ফিরে আসে। তবে নারীভেদে এটা ভিন্নও হতে পারে।

পুনরায় গর্ভবতী হতে চাইলে ওভুলেশনের সময় সম্পর্কে ধারণা রাখা ভালো। সাধারণত পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রায় ১৪ দিন পূর্বে ওভুলেশন হয়।কোনো নারীর গড় মাসিক চক্র ২৮ দিনের হলে ১৪তম দিনের আশপাশে ওভুলেশন হবে এবং তার জন্য সবচেয়ে উর্বর সময় হলো ১২, ১৩ ও ১৪তম দিন। যদি গড় মাসিক চক্র ৩৫ দিনের হয়, তাহলে ২১তম দিনের আশপাশে ওভুলেশন হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উর্বর সময় হলো ১৯, ২০ ও ২১তম দিন।

সাধারণত গর্ভপাতের পর পুনরায় গর্ভবতী হতে দীর্ঘ অপেক্ষা না করাই সর্বোত্তম। অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকোলজিতে প্রকাশিত গবেষণায় জানা গেছে, যেসব নারী গর্ভপাতের তিন মাসের মধ্যে আবার গর্ভধারণের চেষ্টা করেছেন তাদের ৫৩ শতাংশ এবং যেসব নারী গর্ভপাতের তিন মাস পর পুনরায় গর্ভধারণের চেষ্টা করেছেন তাদের ৩৬ শতাংশ গর্ভবতী হয়েছেন। তবে চিকিৎসক অপেক্ষা করতে বললে তেমনটাই করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, টার্মিনেটেড প্রেগন্যান্সি বা মোলার প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে অপেক্ষার প্রয়োজন আছে।

আবার গর্ভবতী হতে শরীরকে প্রস্তুত করবেন যেভাবে
গর্ভপাতের পর সফল গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে কিছু পরামর্শ মনে রাখতে পারেন। আপনার চিকিৎসক ফলিক অ্যাসিডের মতো প্রিনাটাল ভিটামিন দিলে তা সেবন করুন। প্রিনাটাল ভিটামিন জন্মত্রুটি প্রতিরোধ করে ও গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়। স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যেমন- ডায়াবেটিস ও হাই ব্লাড প্রেশার। সর্বোপরি, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে ও নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। সফল গর্ভধারণের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ। মনকে প্রফুল্ল রাখলে আশা করা যায় যে, গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়বে। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমাতে পারে এমনকিছুতে জড়িত হোন।
 
ডা. সোহিনী বলেন, ‘যেসব নারীর গর্ভধারণ করতে সমস্যা হয় তারা গর্ভবতী হলেও গর্ভপাতের উচ্চ ঝুঁকি আছে।’ চিকিৎসকেরা জানান, গর্ভপাতের ঝুঁকি কেমন হবে তা বয়সের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে। চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি। এসময় গর্ভধারণের ক্ষমতাও কমতে থাকে। বয়স বেশি না হলে অধিকাংশ নারীরই গর্ভপাতের পর স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ হয়ে থাকে।

সোনালীনিউজ/আইএ