আত্মরক্ষায় কারাতে শিখছে নারীরা

  • সোনালী বিশেষ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১৯, ২০১৮, ০৫:৩১ পিএম

ঢাকা : বখাটে ও উত্ত্যক্তকারীদের লাগামহীন বখাটেপনায় শহর-গ্রামসহ সব জায়গায়ই বিভিন্ন বয়সী নারী, তরুণী ও কিশোরীদের ঘর থেকে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ প্রয়োজনীয় স্থানে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীদের। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দিনের পর দিন বখাটেদের বেহায়াপনা সহ্য করে যাচ্ছেন অনেকে।

কেউ আবার অপমানে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নড়ে বসতে শুরু করেছেন নারীরা। বখাটেদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য তারা শিখছেন মার্শাল আর্ট বা কারাতে, জুডোসহ তায়কান্দোর মতো শারীরিক কৌশল।

শুধু কর্মজীবী নারীই নয়, শরীরচর্চার জন্য লোকলজ্জা কাটিয়ে রাজধানীর অনেক গৃহিণীও শারীরিক আত্মরক্ষার এসব কৌশল শিখতে শুরু করেছেন। এমনকি নিজের মেয়েকে শেখাতে গিয়ে কোনো কোনো উৎসাহী মা নিজেও এসব কৌশল রপ্ত করছেন।

প্রতিনিয়ত বাড়ছে নারী নির্যাতন, ঘরে বাইরে সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী। প্রয়োজনীয় সময়ে যাতে নিজেকে রক্ষা করতে পারে তাই অনেকেই যাচ্ছেন আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করছেন।

নারীরা বলছেন, এতে তাদের মানসিক জোর বাড়ে। নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এতে নারীকে হয়রানির ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে। নারীর জীবন এখন আর চার দেয়ালে বন্দি নয়। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে তাকে যেতে হয় ঘরের বাইরে। কিন্তু যেখানে ঘরেই নারীকে শিকার হতে হচ্ছে হয়রানির, বাইরের নিরাপত্তা সেখানে রূপকথা।

রাজধানীর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে কারাতের প্রশিক্ষণ নেয়া এক কিশোরী জানায়, এখান থেকে যে কৌশলগুলো শিখছি সমস্যায় পড়লে সেগুলো কাজে লাগাবো। আরেক কিশোরী জানায়, 'ট্রেনিং নিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ে আবার এক্সারসাইজও হয়ে যায়।

কন্যা সন্তানকে শৈশব থেকেই আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয় কৌশল শেখাতে আগ্রহী হচ্ছেন অভিভাবকরাও। এক অভিভাবক বলেন, 'বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য এটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

নিরাপত্তার দায়িত্ব যখন সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঁধে থাকার পরেও মিলছে না প্রতিকার, তখন নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিচ্ছে নারীরা। আত্মরক্ষার সঠিক কৌশল জেনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে তার প্রভাব পড়বে অপরাধীর মনস্তত্বে, এমন চিত্র উঠে এসেছে বেশ কিছু গবেষণায়ও।

অপরাধীরা ভীতু ও দুর্বল। পাল্টা আঘাত হানতে পারলেই দ্রুত পাল্টা যাবে দৃশ্যপট বলে মন্তব্য করেছেন নারী অধিকার কর্মীরা। নারী অধিকারকর্মী রাশেদা রওনক খান বলেন, 'কৌশলটা শিখতে হবে। কিন্তু এটা ঘরে বসে জানা যাবে না। যদি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেওয়া যায় তাহলে সম্ভব। শারীরিকভাবে সবাই এইরকমভাবে সবল হবে না। কিন্তু মানসিকভাবে যদি সে নিতে পারে তাহলে মানিয়ে নেয়া সম্ভব।'

নারীদের এমন কর্মশালা ব্যবস্থার জন্য নিজের কিছু করার তাগিদই বড় বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। সেনসি মশিউর রহমান বলেন, এতে মন এবং শরীর দুইটাই মজবুত হয়ে যায়। যে কারণে প্রতিবাদ করার মানসিক এবং শারীরিক একটা শক্তিমত্তা চলে আসে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জুডো, কারাতে, মার্শাল আর্ট, ক্রাভ-মাগা, তায়কেয়ান্দ ইত্যাদি কৌশল শেখানো হচ্ছে নারীদের।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর