মায়ের ভেজা চোখ

  • মো: গোলাম মোস্তফা (দুঃখু) | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৩:১০ পিএম

ঢাকা : কল্পনার সাথে কথা বলার অভ্যাস টা বুঝি এখন নিয়মিত হয়ে যাচ্ছে আমার সাথে, স্বপ্নের বাড়িতে কেন জানি সবসময় থেকে যেতে ইচ্ছে করে। কারণ অকারণে সংলাপ বলতে ভালো লাগে সবসময়, নিয়ম সময় চলে যায় তার মতো করে। ছোট অধ্যায়ে দুঃখ রাখতে নেই হৃদয়ে, তাই কল্পনার সাথে জীবনের সংলাপ বলে যে আনন্দ পেয়ে থাকি তা অন্য কোথাও পাইনা।

হঠাৎ কল্পনাতে মায়ের সাথে সংলাপ বলছি কিন্তু মাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন জানি নাকি আমার কল্পনা আমার সাথে ছলনা করছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সকাল হলো খেয়াল করি নাই, অন্য দিকে আমার পোষা ময়না গান গাইছে মনের সুখে।

অন্তর ব্যাথা কেন জানি সকাল থেকে পিছন ছাড়ছে না! কোন কাজ করতে ভালো লাগছে না, সকালবেলার নাস্তা না করে বের হয়ে গেলাম অন্তর ব্যাথা কমানোর জন্য। বাসের টিকেট  কেটে জানালার পাশে বসলাম মেঘলা মন নিয়ে, গাড়ি ছেড়ে দিলো আর আমি বাহিরে তাকিয়ে রইলাম আর আকাশের রঙ দেখছি মিনিটে মিনিটে বদলাছে। এই ভাবে হয়তো মানুষের মন বদলায়, যা আজ সকালবেলা আমার সাথে হলো।

আচ্ছা আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে গিয়ে আগে কি বলবো, কেমন আছো জিজ্ঞেসা করবো নাকি তোমার শরীর ভালো আছে নাকি বলবো। ছোট জীবনের মায়া আমার কাছে তেমন নেই তবে একটা জায়গাতে গিয়ে মনে হয় আমি হাজার বছর বাঁচতে চাই, বিদায় সুর জেনো কখনো না আসে আমার। চোখের জল কে বলি তুমি থমকে যাও আমি যে আমার ঠিকানার কাছে এসেছি।

মায়ের আঁচল যে আমার জীবনের বড় ঠিকানা, এই ঠিকানায় কোন কষ্ট নেই আছে মমতাময়ী মায়ের ভালোবাসা। কতো দিন হলো মা কে দেখি না, মা বলে ডাকি না। এই হৃদয় আয়নার যন্ত্রনা যে কাউকে দেখাতে পারি না, নষ্ট সমাজে কাকে বলবো আমার কষ্টের কথা। শুনার মতো মানুষ নেই তবে আড্ডা এবং খাওয়া মজা করার অনেক মানুষ আছে আমার চার পাশে।

আমি আমার ঠিকানায় চলে এসেছি, বাস থেকে নেমে রিকশা নিয়ে আবার রওনা হলাম। হৃদয়ের মাঝে সাগরের ঢেউ শুরু হয়েছে কারণ আমি যে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, শক্তি হারিয়ে গিয়েছে শরীর থেকে কথা বলতে পারছিলাম না কলিং বেল দিতে পারছিলাম না কেন জানি। অনেক কষ্ট করে দরজায় নক দিলাম, ভিতর থেকে কে জানি বললো আসছি।

দরজাটি খুললো আমার ছোট বোন আনিকা, আমাকে দেখে চিৎকার শুরু করলো আর মাকে বলছে মা মা আমাদের ভাই এসেছে। আনিকা বললো ভাইয়া ভিতরে আসো, ওর সাথে ভিতরে গিয়ে বসলাম। আমাকে সবাই দেখে অনেক খুশি, ছোট বোন আমার জন্য নাস্তা আনতে শুরু করলো।

দরজার আড়াল থেকে মা আমাকে দেখছে আমি প্রথমে খেয়াল করিনি, যখন দেখলাম নিজের অজান্তে চোখে জল আসতে শুরু করলো। আমি খালি শুনতে পাচ্ছি মায়ের কান্নার শব্দ আর এই ব্যাথা যে অনেক দিনের জমা, আনিকা কে বললাম মা কোথায়? মা তো দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছে আর কান্না করছে।

আমি আওয়াজ করে মাকে বললাম মা তুমি কেমন আছো? মা শুধু বললো অনেক ভালো আছি, আমি বললাম তুমি সামনে আসো না কেন? কতো দিন তোমাকে দেখি না। কিছুক্ষণ পর মা আসলো আমার জন্য ফল নিয়ে, আমায় বললো তোর শরীর কেমন আছে বাবা?  বললাম তোমাকে দেখে আমি এখন অনেক ভালো আছি।

মায়ের আঁচল চোখের জলে ভিজে গেছে! মা’রা আসলে বড় অসহায় তার জীবনে। আমার মা সবসময় আমার জন্য কান্না করে যা অন্য কেউ জানে না, তা আমি জানি মায়ের মন যে সন্তান কে ডাকে।

মমতাময়ী মা আমার পছন্দের সকল খাবার রান্না করলো, খাবার টেবিলে সবাই কে নিয়ে বসলাম মাকে ও বললাম তুমি আমাদের সাথে বসে পড়ো মা বললো আমাদের আগে খাওয়াবে তারপর। অনেক বলার পরেও বসাতে পাড়লাম না। কতদিন পর মায়ের হাতের  রান্না খেলাম এই সুখ কোটি টাকা দিয়ে পাবো না যে, মনে মনে ভাবলাম মা যদি সারাবছর আমার সাথে থাকতো কতো ভালো হতো কিন্তু তা যে কখনো হবে না।

ঘড়ি কাটা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলো যাবার সময় হয়েছে, সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম তবে মাকে খুঁজে পাচ্ছি না, ছোট বোন এসে বললো মা শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। আমি উনার কাছে গিয়ে বললাম ”মা” আমি চলে যাচ্ছি, তুমি শরীর খেয়াল রেখো সময় মতো খাবার খাবে। আমার জন্য দোয়া করবে, মায়ের পায়ে সালাম করে ঘর থেকে বের হলাম, এঠাৎ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি দরজার আড়ালে মায়ের ভেজা দুটি চোখ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই