মেলায় আসছে মিলটন সফির ‘নিভৃতে নির্বাসনে’

  • সোনালীনিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ১০:৪১ পিএম

ঢাকা: মিলটন সফি। নব্বইয়ের দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন কবি ও কথা সাহিত্যিক। মূলত কবি হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসলেও সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নিভৃত নির্বাসনে’ প্রকাশিত হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ।

বইটি প্রকাশ করেছে শিখা প্রকাশনী। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছে চারু পিন্টু। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হলেও বইয়ের ছাপা বাঁধাই শেষ হয়েছে।

মিলটন সফির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালোপুরুষ' প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। পরের বছরই দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'একটি স্বপ্নাহত নারীর জন্যে প্রার্থনা'। অতঃপর হঠাৎ করেই নির্বাসন। যখন শব্দে-ছন্দে, চিত্র-কল্পে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

কবিতাপ্রাণ এই মানুষটি শুধু কবি’ই হতে চেয়েছিলেন, কবিতাকে ভালোবেসে হেঁটেছেন যোজন যোজন দূর। হাতের মুঠোয় নিয়েছেন ভালোবাসা, সব অপ্রাপ্তিগুলো এঁকেছেন কবিতার রঙে। সেই মানুষটাই ১৫ বছর ছিলেন কবিতা থেকে অনেক অনেক দূরে। কেন এই নির্বাসন, জানতে চাইলে মিলটন সফি জানান, মনের মধ্যে অনেক কথা জমা, সেই জমে থাকা কথাগুলো কখন যেন কবিতা হয়ে থরে থরে জমতে থাকে পড়ার টেবিলে। এর মধ্যে কিছু লেখা পত্রিকায়ও ছাপা হতে লাগল। ছাপার অক্ষরে মনের কথাগুলো ছুঁয়ে দেখি আর বিস্মিত হই। যে কথাগুলো মনের মধ্যে জমতে জমতে একসময় চাপা পড়ে যাচ্ছিল অথবা বলব বলব করেও বলা হয়ে উঠেনি কিংবা পারিনি, সেই কথাগুলো বলতে পারার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম।

তিনি যোগ করেন, মনে হয়েছিল এবেলা না বলতে পারলে হয়ত আর কখনোই বলা হয়ে উঠবে না। সে কথাগুলো জানাতেই বই করার সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং দু’বছর চেষ্টার পর বইটা প্রকাশিত হয়েছিলো ২০০৪ সালে এবং পরের বছরই দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটা এসেছিল। জানিনা এই শহরের মানুষ আমার সেই গোপন কথার খোঁজ নিয়েছিলো কিনা। জানি কেউ জানেনি, অথবা জানবেও না। তারপর থেকে আর প্রকাশ হতে ইচ্ছে হল না। পরে রইলাম নিভৃতে নির্বাসনে, তার এবং সবার চোখের আড়ালে। এভাবেই দিন মাস বছর চলে গেছে এক লহমায়। তাই ১৫ বছরের যাপিত জীবনের গল্পটা আমার কাছে খুব দীর্ঘ নয়।

জানতে চাই, নিভৃতে নির্বাসনের এই দীর্ঘ সময়ের যাপিত জীবনের গল্পটা এবং কেন ফিরে আসা? ‘গত দু’ তিন বছর ধরে মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা শূন্যতা, কি যেন হারিয়ে ফেলেছি বোধ করছিলাম। ভেঙেচুরে নিজেকে গড়তে চেয়েছি বারংবার, পারিনি। শেষ অব্দি কবিতার জয় হয়েছে। তাছাড়া খুব বেশি কবিতা আমি লিখতে পারি না। নিয়ম করে কখনও আমার লেখা হয়ে উঠে না। তাই চাইলেও হয়ত অনেক বই আমি বের করতে পারতাম না। হৃদয়ে যে কবিতার বাস তাকে মস্তিস্ক দিয়ে বুঝতে চাইনি কখনও। কবিতার জন্যে এই জন্ম মেনেছিলাম, নিজের কাছে দেয়া সে প্রতিশ্রুতি আমি রাখতে পারিনি। আমি সরে গেছি। একটা সময় ছিল যখন একদুপুরে ১০-১২টা কবিতা লিখে ফেলতে পারতাম। এখন তা পারি না।’

মিলটন সফি যোগ করেন, জীবন ও জীবিকার অর্থ-অনর্থ দাঁড় করাতে না করাতেই চলে যায় দিন-মাস-বছর, বড় অবহেলায়। কখনো সংসারে অথবা ভিড়ের মধ্যে নিঃসঙ্গ লাগে, বোধে টের পাইনা রহস্যময় সেই হাতছানি, স্মৃতিতে ও অবচেতনায়, স্তবকে। স্বতঃসিদ্ধ ছন্দো নৈপুণ্যে আঁকতে পারি না ভালোবাসা, নিজের মধ্যে খুঁজে বেড়াই নিজেকে। একদিন যে কলমে ছন্দ পোষ মেনেছিলো নিঃশর্ত, সে আজ মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে যেতে চায় আকাশের ওপাড়ে। তাকে বেধে রাখার দড়ি আমার কই?

শ্রেণীসংগ্রাম, প্রকৃতি-জীবন, প্রেম ও নারী আপনার কবিতার মূল বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে বারবার। এবারের কবিতাগুলো কোন ঘরনার এবং কতগুলো কবিতা আছে বইটিতে? শ্রেণীসংগ্রাম, প্রকৃতি-জীবন, প্রেম ও নারী- এগুলো সবইতো জীবনের এক একটি দিক। আমি নির্দিষ্ট কোন ঘরনার কবিতা চিন্তা করে কবিতা লিখতে পারি না। ভালো কবিতা বা মন্দ কবিতাতেও আমার বিশ্বাস নেই। এই যে আমরা বলি ভালো কবিতা অথবা মন্দ কবিতা। এটা কে বলে দিতে পারে কোনটা ভালো কবিতা?

এখনতো অনেক ছোট ছোট কবিতা আসছে, দু’ চার লাইনের অনু কবিতা আসছে। অস্থির সময়ে এই অনু কবিতাগুলোই কিন্তু জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বেশি। বইটিতে মোট ৬৮টি কবিতা আছে এবং এর বেশিরভাগই অনেক পুরনো সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

সোনালীনিউজ/এইচএন