গ্যালারি পরিবারের যাত্রা শুরু

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২১, ০৪:৫১ পিএম

ঢাকা : একজন মানুষ কখনোই পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। তার আশপাশের মানুষগুলোর সহায়তার প্রয়োজন হয়। দরকার হয় একটি পরিবারের। ঠিক তেমনি একজন চিত্রশিল্পী কখনো একা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না।  কারণ একজন শিল্পীর ছবি আঁকার জন্য আর্ট পেপার লাগে, রংতুলি লাগে, ফ্রেম লাগে, আর্ট ক্রিটিক, চিত্রকর্ম প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি লাগে। এসব বিষয়ে সম্পৃক্ত থাকেন অনেক লোক। যেন চিত্রকলার একটি পরিবার। ঠিক এমনি চিন্তাভাবনা থেকে যাত্রা শুরু করল গ্যালারি পরিবার। গ্যালারিটি করেছেন চিত্রশিল্পী হারুন ফকির। তিনি একজন সংগ্রাহক। হারুন ফকিরের বনানীতে একটি সংগ্রহশালা আছে, যেখানে রয়েছে অসংখ্য নামকরা শিল্পীর চিত্রকর্ম। করোনার এই সময়ে যখন অনেক আর্ট গ্যালারি সাময়িকভাবে বন্ধ, চিত্রপ্রদর্শনী যেখানে হচ্ছে একেবারেই কম; সেখানে এই সময়ে নিজ খরচে একটি গ্যালারি করা কঠিন ব্যাপারই বটে। হঠাৎ করেই শিল্পী হারুন ফকির কেন এই গ্যালারি করতে উদ্বুদ্ধ হলেন? জবাবে হারুন ফকির বলেন, ‘আসলে বিষয়টি হঠাৎ করেই নয়। আমার পরিবার সংস্কৃতিমনা পরিবার। আমার জন্ম ঢাকায়। বেড়ে ওঠা বনানীতে।  আমার চাকরিজীবী বাবা পরে শিল্পপতি হন। ২০১৩ সালে ব্যবসার পাশাপাশি চিন্তা করলাম, এখানে তো আমার আত্মার খেরাক পাচ্ছি না। কী করা যায়! তখন থেকেই চিন্তা করলাম একটা গ্যালারি বানাব। তখন আমি বিভিন্ন শিল্পীর বই কিনে পড়তে থাকি। সে সময় আমার বড় ভাই নুরুজ্জামানের ডটস আর্ট  গ্যালারি ছিল। তার ঐ গ্যালারিতে সমসাময়িক শিল্পীদের আনাগোনা ছিল। তখন আমি বিভিন্ন ছবি দেখতাম। আমার ছোট ভাই আশরাফুজ্জামান ছোটবেলা থেকেই ভালো ছবি আঁকত। ওখান থেকে আমি আরো বেশি উৎসাহ পাই। কারু ও দারুশিল্প  সংগ্রহ শুরু করি আমার মার কাছে অনুপ্রাণিত হয়ে। চিত্রকর্ম সংগ্রহে আসক্ত হই বড় ভাইয়ের কারণে। এভাবেই শুরু।’

অন্য কোনো জায়গায় না হয়ে এই ফিলিং স্টেশনের ভেতরে এই গ্যালারি করলেন, এর বিশেষ  কোনো কারণ আছে কি? জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে গ্যালারি করেছি যাতে ছবির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। আমার স্বপ্ন আমি এই গ্যালারি করে যদি চিত্রসংগ্রাহক বাড়াতে পারি। দেশীয় চিত্রকলাকে প্রসারিত করতে পারি। এটাই আমার বড় সাফল্য হবে বলে আমি মনে করি। কারণ রাজধানীর বিভিন্ন গ্যালারি পরিদর্শন করার নির্দিষ্ট সময় থাকে। চিত্রপ্রদর্শনীও একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত চলে। এখন করোনার কারণে অনেকে সেখানে যান না। এই শপে প্রতিদিন অসংখ্য লোক আসে। মাসে প্রায় ৩০০০ লোক আসে। তারা কেনার পাশাপাশি চিত্রকর্মগুলো সহজেই দেখতে পারবে আর এই শপ সারাদিনই খোলা থাকে। এখানে সব ধরনের মানুষ আসেন। তারা ছবিগুলো দেখলেন। সংগ্রহ করার প্রতি আগ্রহ দেখালেন। এভাবে যদি সংগ্রাহক বাড়ানো যায় তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি।’ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি এখানে একটা বড় বিল্ডিং করব। এখানে তখন বড় গ্যালরি হবে। আমার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে একটা সংগ্রহশালা করব।’

একজন সংগ্রাহকের পাশাপাশি হারুন ফকির একজন শিল্পীও। ছবি দেখতে দেখতে একসময় ছবি আঁকার প্রতি প্রবল আগ্রহের জন্ম নেয়। এরই মাঝে শিল্পীর সাথে হঠাৎ একদিন দেখা হয়ে যায় বিখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান স্যারের সাথে। তার গভীর সংস্পর্শ ও উৎসাহেই শিল্পী হওয়ার সাধনায় আঁকাআঁকিতে মগ্ন হয়ে পড়েন।  এ পর্যন্ত হারুন ফকির একক চিত্রপ্রদর্শনী করেছেন ২টা আর গ্রুপ প্রদর্শনী করেছেন ৪টি। শিল্পী বলেন, ‘আমার অ্যাক্রিলিকে কাজ করতে ভালো লাগে। আমি রংতুলি নিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করি। আমি সার্বজনীন কাজ করি। আমি ব্রাশ নিয়ে খেলতে থাকি। ছবির কাজ শুরু করলে পরে চিন্তাটা আসে।’

 তার চিত্রকর্ম সম্পর্কে অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘চিত্রশিল্পী হারুন ফকির একজন বাউল, তার একতারাটি সর্বদাই বাজে। হারুন মগ্ন থাকেন চিত্রকলার জগতে। ছবি সংগ্রহ করেন ও প্রচণ্ড আগ্রহে রংতুলি দিয়ে খেলেন। রঙের ভুবনে হাবুডুবু খান। গড়ে তোলেন রঙের আঁচড়ে নতুন এক ভুবন। শিল্পী বয়সে তরুণ, সম্ভাবনাময়  তার ভবিষ্যৎ। ইতোমধ্যে অনেকেই তার চিত্রকর্ম সংগ্রহ করেছেন। হারুন একজন সফল ব্যবসায়ী, শিল্প সংগ্রাহক ও সফল চিত্রশিল্পী। সে এবার নতুন এই গ্যালারি করল। তার এই উদ্যোগ সফল হোক।’

ভাস্কর আইভি জামান বলেন, ‘হারুন ফকিরের ভেতরে যে শিল্প সত্তা সেটা মোটেই তাৎক্ষণিক ছিল না। তাই তার শিল্পী হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। হারুন ফকির শিল্পকলার সংগ্রাহক;ম কিন্তু তার ভেতরে যেন ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছিল শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য। মনে মনে সে প্রস্তুতও ছিল। হামিদুজ্জামানের স্কেচ, পেন্টিং এবং ছবি আঁকার পারদর্শিতা শিল্পী হারুন ফকিরকে বিশেসভাবে প্রভাবিত করেছে। গুরুকে অনুসরণের মাধ্যমে নিজ মেধাকে পরিশীলিতভাবে সৃজনশীলতায় উজ্জীবিত রাখতেই সর্বসচেষ্ট এ শিল্পী। হারুন ফকির নতুন এই গ্যালারি করেছেন। এই গ্যালারি দেশীয় চিত্রশিল্প চর্চায় ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই