জলপাই-হলুদ মৌটুসি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০১৮, ১২:৪৪ এএম

ঢাকা : পুরুষ পাখিটি দেখতে দারুণ। বারবার দেখতে ইচ্ছা করে। সে তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। অনেক সময় ভিন্ন গোত্রেরও মনে হতে পারে। উভয়ের ঠোঁট দেহের তুলনায় লম্বা। কাস্তের মতো বাঁকানো তীক্ষ্ন ঠোঁটজোড়া ফুলের মধুপানে সহায়ক। উড়ন্ত অবস্থায় ফুলের পাঁপড়ির ভেতর ঠোঁট ঢুকিয়ে মধুপান করে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। স্থিরতা নেই বললেই চলে। মধু এদের প্রিয় খাবার। সারা দিন মধুর সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। বেশির ভাগ সময় একাকী বিচরণ করলেও প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়।

প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বন অথবা গ্রামীণ বনবাদাড়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম, দক্ষিণ চীন, উত্তর নিউগিনিতে দেখা মেলে এদের। আমাদের দেশে প্রায় ৯ প্রজাতির মৌটুসির সাক্ষাৎ মেলে। এদের প্রতিটি প্রজাতির স্বভাব কিংবা আচার-আচরণ একই রকম। চেহারাও প্রায় একই ধাঁচের। পাখি বিশারদ ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে এর জাতপাত নির্ণয় করা বড়ই দুরূহ।

পাখির বাংলা নাম : ‘জলপাই-হলুদ মৌটুসি’, ইংরেজি নাম : ‘অলিভ-ব্যাকেড সানবার্ড’ (Olive-backed Sunbird) বৈজ্ঞানিক নাম : Cinnyris jugularis। এরা ‘জলপাইপিঠ মৌটুসি’ নামেও পরিচিত।  গড় দৈর্ঘ্য ১২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির কপাল, গলা ও বুকের উপরিভাগ ধাতব-নীল কালো। ঘাড় ও পিঠ জলপাই রঙের। ডানা ও লেজ কালচে-জলপাই। ওড়ার পালক হলুদ-সাদা। বুকের মাঝামাঝি থেকে লেজতল পর্যন্ত উজ্জ্বল হলুদ।

চোখ বাদামি কালো; চোখের ওপর নিচে ভ্রু আকৃতির হলুদ টান। ঠোঁট শিং কালো; কাস্তের মতো বাঁকানো। পা ধূসর-কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির কপাল, ঘাড় ও পিঠ ময়লা জলপাই রঙের। গলা থেকে লেজতল পর্যন্ত ময়লা হলুদ। চোখের ওপর আবছা ময়লা সাদা টান। বাদবাকি পুরুষ পাখিদের মতো। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার  ফুলের মধু। ছোট পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। 

প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট। অঞ্চল ভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূমি থেকে দুই-তিন মিটারের মধ্যে ঝুলন্ত বাসা বাঁধে। নাশপাতি আকৃতির; দেখতে কিছুটা বাবুই পাখির বাসার মতো। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের তন্তু, শ্যাওলা, মাকড়সার জাল, তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ১-২টি। ফুটতে সময় লাগে সপ্তাহ দুয়েক।
 
লেখক : আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।  alamshine¦gmail.com