বইমেলা প্রতিদিন

প্রকাশকদের মুখে হাসি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯, ১১:৫২ এএম

ঢাকা : একাদশতম দিনে এসে অমর একুশে গ্রন্থমেলা পুরোপুরি জমে উঠেছে। সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থমেলার প্রতিটি স্টলে বই বিক্রির পরিমাণও আগের যেকোনো দিনের চেয়ে ভালো ছিল। লেখকরা মেলায় আড্ডা দিয়েছেন পাঠকের সঙ্গে। সেলফি, অটোগ্রাফে পরিপূর্ণ এক মেলার চিত্রই দেখা গেছে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেষ হওয়াতে গ্রন্থমেলায় তার প্রভাব পড়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। প্রিয়মুখ প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদ ফারুক বলেন, আমরা এমনটাই আশা করেছিলাম। এমনিতেই মেলা জমে ওঠার সময় হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চলছিল। একইসঙ্গে দুটো মেলা চললে তার কিছুটা প্রভাব তো গ্রন্থমেলার ওপর পড়েই। সেটাই হয়েছিল। এখন থেকে মেলা শেষ পর্যন্ত জমজমাট থাকবে বলে মনে করছি।

সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মেলা ঘুরে দেখা যায়, সব স্টলেই কমবেশি পড়ুয়াদের ভিড়। কেনাবেচাও হচ্ছে। এর আগে বই উল্টে-পাল্টে দেখার মানুষ বেশি ছিল। এখন আর সেটা নেই। এখন বরং বইয়ের ক্রেতাই বেশি। সঙ্গত কারণে প্রকাশকদের মুখেও ফুটেছে হাসি।

এদিন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনুপম হায়াৎ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আমানুল হক, লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং শিবলী মহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কামাল লোহানী।

প্রাবন্ধিক অনুপম হায়াৎ বলেন, রক্ষণশীল বাঙালি মুসলিম সমাজে বুলবুল চৌধুরী ছিলেন এক বিদ্রোহী নৃত্যশিল্পী। নৃত্যের মাধ্যমে তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সুকুমার বৃত্তি ও মানবিকবোধ জাগিয়েছেন। নৃত্য যে রাজনৈতিক-সামাজিক চেতনাবোধ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করতে পারে এবং ক্ষুধা-মন্বন্তরের সময় মুনাফাখোর, চোরাকারবারি, অসৎ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিবাদ ছড়াতে পারে বুলবুল চৌধুরীই প্রথম তা দেখিয়েছেন। তিনি বিদেশি শাসক-শোষকদের দেশ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন নৃত্যের মাধ্যমে। নৃত্যকে তিনি সাংগঠনিক ও পদ্ধতিগতভাবে চর্চার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করেছেন।

আলোচকরা বলেন, বুলবুল চৌধুরী নৃত্যচর্চায় সমকালীন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। তার অনুসৃত পথ ধরে নৃত্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, একাডেমি, সমিতি, শিক্ষা, গবেষণা, প্রকাশনা এগিয়ে চলেছে তার জন্মশতবর্ষ পরেও। জন্মশতবর্ষে বুলবুল চৌধুরীর সমস্ত সৃষ্টিকর্ম সংগ্রহ, সংরক্ষণপূর্বক প্রচার, প্রকাশ, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তার নৃত্যকর্ম পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তাকে নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা যেতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে কামাল লোহানী বলেন, বুলবুল চৌধুরী নৃত্যের পাশাপাশি প্রাচী নামের উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। তার নৃত্য কেবল প্রায়োগিক শিল্পকলা নয়, একই সঙ্গে সমস্ত অসুন্দর এবং কলুষতার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদের নাম।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন হোসেন উদ্দীন হোসেন, হাবিব আনিসুর রহমান, ড. তাশরিক-ই-হাবিব, মশিউল আলম এবং শিহাব শাহরিয়ার।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং চঞ্চল আশরাফ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন গোলাম সারোয়ার এবং মু. আহসান উল্লাহ ইমাম খান তমাল। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী চন্দনা মজুমদার, শফি মণ্ডল, সেলিম চৌধুরী, পাগলা বাবুল, রুশিয়া খানম এবং কোহিনুর আকতার গোলাপী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), মো. মামুনুর রশিদ (বাঁশি), আনোয়ার সাহাদাত রবিন (কি-বোর্ড), রতন কুমার রায় (দোতারা)।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১২৮টি। গল্পগ্রন্থ ২১, উপন্যাস ১৬, প্রবন্ধ ১০, কবিতা ৪৯ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৩২টি। এর মধ্যে ময়ূরপঙ্খী থেকে ধ্রুব এষের গল্পগ্রন্থ ‘বুড়োর লম্বা দাড়ির কাহিনি’, আগামী প্রকাশনী থেকে হুমায়ুন আজাদের সাহিত্য সমালোচনা ‘উনিশ শতকের বাঙলা সাহিত্য’, চিলড্রেন বুক কালেকশন থেকে আনিসুল হকের শিশুতোষ ছোটগল্প ‘গুড্ডু বুড়ার নতুন বোকামি তারপর...’, কথাপ্রকাশ থেকে শাকুর মজিদের আত্মজীবনী ‘বুয়েটকাল’ ও অনন্যা থেকে রকিব হাসানের অ্যাডভেঞ্চার ‘অচেনা গ্রহের কিশোর’ অন্যতম।

আজকের অনুষ্ঠান : মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১২তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি-অনুবাদক মনিরউদ্দীন ইউসুফ : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশ নেবেন শফিউল আলম, রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং মোহাম্মদ আবদুল হাই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই