প্রতিদিনের বই মেলা

কমে আসছে নতুন বই প্রকাশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৭:৫৬ পিএম

ঢাকা : গ্রন্থমেলার শেষদিন পর্যন্ত নতুন বই প্রকাশ হওয়ার চল আছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো সাধারণত মেলার প্রথমার্ধেই প্রকাশ করে থাকেন প্রকাশকরা। সে হিসেবে এবারের গ্রন্থমেলার গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো প্রকাশ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মেলা ঘুরে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে তেমনটাই জানা গেল।

শিশুতোষ প্রকাশনী বাবুই-এর কর্ণধার কাদের বাবু জানান, মেলার জন্য তাদের সিংহভাগ বই প্রকাশ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন আর নতুন বই প্রকাশের সময় নেই। মেলা শেষ দিনগুলোতে চলে এসেছে। এখন নতুন বই প্রকাশের সময়ও নেই।

একই কথা শোনালেন কালো’র প্রকাশক শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ। তিনি বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে এবারের মেলা উপলক্ষে আর একটা বইও প্রকাশ হবে না। মূলত আমরা মেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশের প্রস্তুতিটা আগেই সেরে ফেলেছিলাম। তারপরও মেলার প্রথমার্ধজুড়েই নতুন বই এসেছে। কিন্তু এখন আর বাকি নেই কিছু।

বড় বড় প্রকাশনীগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকি দিনগুলোতে কিছু নতুন বই তারা প্রকাশ করবেন ঠিকই, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো ইতোমধ্যে প্রকাশ করে  ফেলেছেন। তাই পাঠক এখন মেলায় এলে খুব বেশি বঞ্চিত হবেন না।

এদিকে গতকাল শনিবার  অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৩তম দিন নতুন বই এসেছে  ১৮৬টি। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ ৩৩, উপন্যাস ৩০, প্রবন্ধ ৭, কবিতা ৭২ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৪৪টি।

গতকাল ছিল এবারের মেলায় শেষ শিশুপ্রহর। বেলা ১১টার পর শিশু-কিশোররা মেলায় প্রবেশ করে টুকটুকি-হালুমদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছে।

এ ছাড়া ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের প্রকাশনা : অতীত ও বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহ্রুখ মহিউদ্দীন। আলোচনায় অংশ নেন ফরিদ আহমেদ এবং এএফএম হায়াতুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রকাশনা-ঐতিহ্যের অঙ্গীকারকে ধারণ করে এ দেশের প্রকাশকরা উদ্যোগী হয়ে বিশিষ্ট নাগরিক, বিশেষজ্ঞ ও সত্যিকারের পড়ুয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরিষদ গঠন করুক, যারা বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের সমস্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাববেন, এর অর্থনীতি, রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন এবং নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথগুলো দেখিয়ে দেবেন। তাদের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে আমরা প্রকাশনাশিল্পকে একটা পেশাদার ভিত্তি দিতে পারব। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গবেষণা ও সৃজনশীলতার চর্চা বিকশিত হবে এবং সত্যিকারের একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারব।

আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের প্রকাশনা অতীতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। এ দেশের ভাষা, শিক্ষা ও সাহিত্যের অগ্রযাত্রার সমান্তরালে প্রকাশনার ব্যাপ্তিও বেড়েছে বহুগুণ; যদিও পূর্ণাঙ্গ শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি এখনো। তারা আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রিত প্রকাশনার আকালের সময়ে বাংলাদেশে মুদ্রিত প্রকাশনাকেন্দ্রিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রন্থমেলার আয়োজন প্রমাণ করে এ দেশের প্রকাশনাশিল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত ইতিবাচক।

সভাপতির বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশের প্রকাশনা জগৎ দিন দিন বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং নব-আঙ্গিকে বিকশিত হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন এ দেশের প্রকাশনাকে দিয়েছে নবতর মাত্রা। তবে কেবল একুশের গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক না হয়ে প্রকাশনা যদি বছরব্যাপী চলমান এবং উদ্ভাবনশীল থাকে তবেই এ দেশের প্রকাশনার গুণগত অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হবে।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন ইমদাদুল হক মিলন, মইনুল আহসান সাবের, হাসান আল আবদুল্লাহ, মেহেদী উল্লাহ এবং মিল্টন রহমান।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, জরিনা আখতার, মুনীর সিরাজ, ঝর্না রহমান, আলতাফ শাহনেওয়াজ, স্নিগ্ধা বাউল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা সিদ্দিকা সুমি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’ এবং মো. আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’র শিল্পীদের পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাইদুর রহমান বয়াতি, আরজ আলী বয়াতি, আমজাদ দেওয়ান, বিমল বাউল, কাঙ্গালিনী সুফিয়া, মো. গঞ্জের আলী, রাতুল শাহ, মো. দেলোয়ার হোসেন বয়াতি ও জামাল দেওয়ান।

আজকের অনুষ্ঠান : আজ রোববার মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বলধা গার্ডেন : আমাদের উদ্যান-ঐতিহ্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মোকারম হোসেন। আলোচনায় অংশ নেবেন হাশেম সূফী, মোহাম্মদ আলী খান, নূরুন্নাহার মুক্তা। সভাপতিত্ব করবেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই