ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কর্মযজ্ঞ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২০, ১০:০২ পিএম

ঢাকা : নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটগ্রহণে ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) দিকে ঝুঁকছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার শুরু করেছে সংস্থাটি।

সংসদীয় উপনির্বাচনসহ চলমান অধিকাংশ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পুরোটাই ইভিএমে হবে। আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ইসি ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে। গত বুধবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ’ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়।

ইসি সূত্র জানায়, এই মেশিনের ওপর আস্থা আনতে ব্যাপক হারে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ইভিএম সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। ভোটের আগে কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম প্রদর্শন করা হবে। সিনেমা হলগুলোতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আগে ইভিএমের বিষয়ে কনটেন্ট প্রচার করা হবে।

এর বাইরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জনবহুল স্থান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লিফলেট বিতরণ করা হবে।

শুধু তাই নয়, ইভিএমের ব্যবহার বিষয়ে প্রায় ৪৬ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইসি। আর দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের দিন কেন্দ্রগুলোতে থাকবেন পাঁচ হাজারেরও বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য।

বুধবারের বৈঠকে জানানো হয়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ৪৫ হাজার ৭৭০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার ইভিএম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৬৮ জন প্রিজাইডিং, ১৪ হাজার ৪৩৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ২৮ হাজার ৮৬৮জন পোলিং অফিসার রয়েছেন। তাদের কয়েকটি ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া, ভোটার এডুকেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডেমোনেস্ট্রেটরদের দুদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ইভিএমের ওপরে ভোটারদের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হবে। আগামী ২৮ জানুয়ারি সব কেন্দ্রে ভোটারদের জন্য মক ভোটিং (ইভিএমে ভোট দেওয়ার প্রশিক্ষণ) অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকে আরো জানানো হয়, ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে মোট ৫ হাজার ২০০ ও প্রতি কক্ষে একটি করে মোট ১৪ হাজার ৬০০টি ফেস্টুন লাগাবে ইসি। এ ছাড়া ইভিএম বিষয়ক ৫ লাখ ৭০ হাজার লিফলেট প্রচার করা হবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইভিএম বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের হাতে ৯০ হাজার লিফলেট দেওয়া হবে। স্কুল, কলেজ, শপিং মলসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানেও বিতরণ করা হবে।

এ ছাড়া, পত্রিকা, টেলিভিশন ও ডিজিটাল বিলবোর্ডে ইভিএম বিষয়ক প্রচার করা হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সব সিনেমা হল ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ইভিএম নিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে এসএমএস দিয়ে ভোটারদের ইভিএম ভীতি দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বুধবার বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা সিটির নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এতে ইভিএম নিয়ে কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা উঠে আসে। ইভিএমে ভোট নিতে এখন পর্যন্ত কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কী কী কাজ বাকি রয়েছে- সেসব তথ্যও তুলে ধরা হয়। ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে সব কর্মকর্তাকে আন্তরিক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ’ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় দূর করতে ব্যাপক প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শন করা হবে, যেন সাধারণ মানুষ এ মেশিনে কীভাবে ভোট দেবেন, তা জানতে পারেন। ইভিএম নিয়ে কারো মধ্যে কোনো প্রশ্ন থাকলেও তারা যাচাইয়ের সুযোগ পাবেন।’

এদিকে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে ভীতি-বিভ্রান্তি রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণে অনিয়ম চাপা দিতে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে যে বদনাম হয়েছে, সেটা ধুয়েমুছে সাফ করা দরকার। নির্বাচন কমিশন বেহায়া-নির্লজ্জের মতো বলেছে, ইভিএম হলে দিনের ভোট রাতে হবে না। আপনিই তো তখন সিইসি ছিলেন। আপনি ওই নির্বাচন বাতিল করতে পারেননি? ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ইভিএম করেছেন।

ইভিএম ব্যবহারে জনগণ এখনো প্রস্তুত নয় বলে জানান ঢাকা উত্তরে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তাবিথ বলেন, সকল পরিস্থিতি বিবেচনায় ইভিএম ব্যবহার করার মতো জনগণ এখনো প্রস্তুত নয়। নির্বাচন কমিশন নিজেই স্বীকার করছে, তাদের প্রশিক্ষিত জনবল নাই, সেনাবাহিনীর থেকে ধার করতে হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই