বাড়বে পানির দাম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০, ০১:৫৬ পিএম

ঢাকা : ঢাকা ওয়াসার সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন সময়ের তদন্তেও ঢাকা ওয়াসার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব কারণে সংস্থাটি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে বিভিন্ন সময়। নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা অদ্যাবধি নিশ্চিত করা যায়নি।

সব নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেই আবারো পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা)। আর পানির দাম বাড়ানোর এই উদ্যোগকে অযৌক্তিক, গ্রাহক নির্যাতনমূলক ও প্রচলিত নীতির বিরোধী বলেছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ গণশুনানি সাপেক্ষে মূল্য নির্ধারণের দাবি করেছে টিআইবি।

জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসা আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। সে হিসাবে দাম বাড়বে প্রায় দ্বিগুণ। বাণিজ্যিক গ্রাহক পর্যায়ে ৩৭ দশমিক শূন্য ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করতে চায় ওয়াসা। সার্বিকভাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে।

আবাসিকে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম বাড়ছে ৮ টাকা ৪৩ পয়সা। বাণিজ্যিক ও শিল্পে পানির দাম বাড়ছে ২৭ টাকা ৯৬ পয়সা। বর্তমানে ওয়াসার বার্ষিক পানির গড় বিল প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; সেটা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)বলেন, পানির দাম বাড়ানো হয়নি এখনো। আপনারা বিষয়টি কীভাবে জানতে পারলেন। এটি একটি প্রক্রিয়া। এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। টিআইবি পানির দাম বাড়ানোর আগে যে গণশুনানির কথা বলেছে সেটি টিআইবির স্বাধীনতা বলেও জানিয়েছেন মোস্তফা তারেক।

তিনি বলেন, আমি টিআইবির বিবৃতির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির বিধানের সঙ্গে এই প্রস্তাব সাংঘর্ষিক। টিআইবি বলছে, প্রস্তাব অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধি পানির গুণগত মান নিশ্চিতে ব্যর্থতার কারণে হতাশ নগরবাসীর জন্য

অধিকতর নির্যাতন ও বিড়ম্বনার কারণ হবে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর অন্যায্য চাপ আরো বাড়বে। উন্নয়ন ব্যয় বহনের নামে সেবার মান উন্নত ও পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত না করে মূল্য বৃদ্ধির এই অন্যায্য প্রস্তাব ঢাকা ওয়াসার একগুয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াসার সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ গণশুনানির মাধ্যমে ওয়াসা আইন ও সেবার মান, বিশেষ করে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও গুণগত মান নিশ্চিত করা সাপেক্ষে যৌক্তিক ও সহনীয় মাত্রায় মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে।

ঢাকা ওয়াসা নিয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিলে টিআইবি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা ওয়াসার অধীনে জরিপে অন্তর্ভুক্ত ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ সেবাগ্রহীতা চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতার কাছে সরবরাহকৃত পানি অপরিষ্কার। আর ৪১ দশমিক ৪ শতাংশের কাছে সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধযুক্ত। ওয়াসার সেবার মান ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতাই অসন্তুষ্ট। অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও সিস্টেম লস নিরসনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জরুরি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সেবার মান বাড়াতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গৃহীত ঋণ পরিশোধ ও ভর্তুকি মেটাতে অতিরিক্ত অর্থের দরকার রয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর নামে অযৌক্তিকভাবে পানির মূল্য বাড়ানোর আগে ঢাকা ওয়াসার ক্রয় প্রক্রিয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং গ্রাহক পর্যায়ের মিটার রিডিংসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অবহেলা ও ধীরগতির কারণে অনুমোদিত মেয়াদ অতিক্রম করলেই কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়, যা জনগণের অর্থের অপচয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিল আদায়ে অবহেলা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণসহ ওয়াসার চলমান কর্মকাণ্ড কর্তৃত্ববাদী। ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারলে ওয়াসার অর্থের জোগান অনেক বাড়বে।

বিবৃতিতে ওয়াসা আইনে পানির মূল্য নির্ধারণের আগে বিশেষজ্ঞসহ সেবাগ্রহীতাদের মতামত গ্রহণের জন্য গণশুনানির বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার মূল্য নির্ধারণে স্বতন্ত্র রেগুলেটরি কাঠামো গঠন এবং ওয়াসা বোর্ডের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠনের আহ্বান জানায় টিআইবি।

হাড়ে হাড়ে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিনের কার্যক্রম থেকে শুরু করে চলমান ও বাস্তবায়িত সব প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাসকিম এ খানের নিয়োগ নিয়েও অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এমডির দেশে ও বিদেশি একাধিক ব্যাংক হিসাবের তথ্য মিলেছে। রয়েছে একাধিক বাড়ি ও জমি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ-সংক্রান্ত একটি বিশদ নথি হাতে এসে পৌঁছেছে।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. ফখরুল বাশার বলেন, নগরীতে এমনিতেই কঠিন হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনযাপন। মূল্যস্ফীতিতে চিড়েচ্যাপ্টা সাধারণ মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু আয় খুব বাড়ছে না। তার ওপর নতুন করে পানির দাম বাড়ালে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়বে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই