গেরিলা আক্রমণ থেকে সম্মুখযুদ্ধের গতি বৃদ্ধি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২০, ১২:১৬ এএম

ঢাকা : বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালীর অহঙ্কার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালী তার আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা ও স্বাধীন পতাকা পেয়েছিল যে মাসে, তার নাম ডিসেম্বর।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশজুড়ে চলমান ‘মুজিববর্ষ’-এর মধ্যেই শুরু হলো বাঙালীর কাক্সিক্ষত মুক্তিসংগ্রামে বিজয় অর্জনের মাস ডিসেম্বর। আগামী বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনটিকে সামনে রেখে এবারের বিজয়ের মাস বিশেষ তাৎপর্য বয়ে এনেছে পুরো জাতির জীবনে।

মুক্তিপাগল বাঙালী জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই ডিসেম্বরেই ছিনিয়ে আনে হাজারো বছরের লালিত স্বপ্ন প্রিয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই ডিসেম্বর হচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন জাতি ও ভূখণ্ডের স্বীকৃতি আদায়ের মাস। ২৪ বছরের পাকিস্তানী শাসন-শোষণকে পদানত করে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলার দামাল সন্তানরা ছিনিয়ে আনা বীরত্বগাঁথা বিজয় অর্জনের মাস।

৪৯ বছর আগের ২ ডিসেম্বর। একাত্তরে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর যতই এগিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যেন ততই এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় মেতে ওঠে হিংস্র পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য। নবেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজী তার রাজাকার, আলবদর ও সেনাবাহিনীকে দেশের চারদিকে ছড়িয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে। কিন্তু তখনও হানাদার বাহিনী বুঝতে পারেনি তাদের পতন অত্যাসন্ন।

একাত্তরের রক্তক্ষরা এই দিনে গেরিলা আক্রমণ থেকে সম্মুখযুদ্ধের গতি বাড়ে। অপ্রতিরোধ্য বাঙালীর বিজয় রথে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে থাকে। পরাজয়ের আভাস পেয়ে তৎকালীন পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন মরিয়া হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে একটি চিঠি পাঠান। ইয়াহিয়া তার চিঠিতে যুদ্ধকালীন সাহায্যের আশায় ১৯৫৯ সালের পাক-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির এক অনুচ্ছেদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। সীমান্ত এলাকায় পাক জান্তারা সমরসজ্জা বৃদ্ধি করায় ভারতও তা মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়।

ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই ত্রিমুখী যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। এসব দেখেশুনে ভারত সরকার বুঝেছিল, পাকিস্তান যুদ্ধ করবেই। ভারত তখন যে রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা বা আশা একেবারে ছেড়ে দিয়েছে তা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে ভারত সামরিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল। পশ্চিমের প্রস্তুতি দেখে এবং নাশকতামূলক কাজের লোক ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত মোটামুটি পরিষ্কার বুঝে ফেলে পাকিস্তান রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যাবে না, বরং লড়াই-ই করবে। তাই তখন থেকে ভারতের প্রস্তুতিও জোরদার হয়েছিল।

অন্যদিকে বীর বাঙালীর গেরিলা আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে পাক সৈন্যরা। যতই সময় গড়াচ্ছিল গেরিলা আক্রমণ ততই প্রবল হতে থাকে। পাক সেন্যদের হাতে তখনও আধুনিক অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে পরাস্ত করতে থাকে। মুক্তিপাগল বাঙালীর অকুতোভয় লড়াইয়ে পাক হানাদারদের রাতে চলাফেরাও কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়াজী বুঝতে পারে, এবার বড় ধরনের কিছু করতে না পারলেই নয়।

তাই মার্কিন সাহায্য নিশ্চিত, নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি, রাজাকার-আলবদর-আলশামসসহ এ দেশীয় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে নিয়ে ব্যাপক নিধনযজ্ঞ চালানোর জঘন্য পরিকল্পনা আঁটতে থাকে কসাই নিয়াজী।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, তাই এবারের মাসব্যাপী বিজয় উৎসব কর্মসূচীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তবুও নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি পুরো মাসব্যাপী স্মরণ করবেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ একাত্তরের সকল বীর শহীদের। একই সঙ্গে ঘৃণা জানাবে উগ্র সাম্প্রদায়িক-স্বাধীনতাবিরোধী ও ঘৃণ্য রাজাকার-আলবদর তাদের দোসরদের প্রতি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এবার করোনা ভাইরাসের কারণে বিজয় দিবসে উন্মুক্ত স্থানে কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না। তবে ইনডোর অনুষ্ঠানে করতে পারবেন এবং অনুষ্ঠান করার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে অনুষ্ঠানে কারা আসছেন, কারা থাকবেন ইত্যাদি।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে মোমবাতি প্রজ্বলন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন। ওই সময় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন অনেকেই।

এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামজিক সংগঠন পহেলা ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবিতে সমাবেশসহ বিভিন্ন একাধিক কর্মসূচী পালন করে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই