হতাশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২১, ১২:৩৯ পিএম

ঢাকা : মহামারী করোনাভাইরাসে কারণে কমে গেছে সাধারণ মানুষের আয়। অনেকেরই আশা ছিল এ বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার আয় করে ছাড় দেবে। তবে তাদের আশা পূরণ হয়নি। আগের মতোই  ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বার্ষিক ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছর। এতে হতাশ হয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি ছিল, করোনাকালে ব্যক্তি-শ্রেণি করমুক্তসীমা কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হোক। কিন্তু এবারের বাজেটে সে দাবি পূরণ হয়নি।

গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরো বাড়ানো উচিত। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশে অনেকেরই কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে। তাদের বেশির ভাগই এখনো করের নেটে নেই। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।

রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। মাসিক বেতন অনুযায়ী তার করযোগ্য আয় রয়েছে। নিয়মিত সরকারকে কর পরিশোধ করেন তিনি। দুই ছেলেমেয়েসহ চারজনের সংসার তাদের। চাকরির আয় ছাড়া আর কোনো আয় নেই। আশা ছিল, বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণির এই ব্যাংকারের জন্য সুখবর থাকবে। কিছুটা হলেও আয়করে ছাড় পাবেন।

হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে নির্ধারিত বেতন দিয়ে ঢাকা শহরে জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আয়করে ছাড় পেলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতাম। কিন্তু সে গুড়ে বালি।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, ব্যক্তি-শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা পরিবর্তনশীল। অর্থনীতির অবস্থা, জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে করমুক্তসীমা নির্ধারণ করা হয়।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই ব্যক্তি করমুক্তসীমা কয়েক বছরের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, যাতে করদাতা আগাম তার হিসাব সহজেই করতে পারেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে করমুক্তসীমা বার্ষিক ৩ লাখ টাকা। ভারতে মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন।

বাংলাদেশে জোট সরকারের আমলে একবার তিন বছরের জন্য করমুক্তসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করা হয়।

জনসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশে ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা খুবই কম। অথচ কর দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে অনেকেরই।

এখন নিবন্ধিত বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৬১ লাখ হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২৫ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩ লাখ রিটার্ন আছে যাদের আয় শূন্য। তাদের কাছ থেকে কোনো কর পায় না সরকার। ফলে নিয়মিত রিটার্ন দিচ্ছে মাত্র ২২ লাখ।

আয় অনুযায়ী বাংলাদেশে কতজনের কর দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এনবিআর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো জরিপ করেনি।

তবে অর্থনীতিবিদসহ আয়কর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ৩ থেকে ৪ কোটি লোকের কর দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের মোট জনগণের এক শতাংশের কিছু বেশি নিয়মিত কর দিচ্ছে।

আয়কর আইনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয় থাকুক আর না থাকুক, বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেই হবে। না দিলে প্রচলিত আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই