ওষুধ সহজলভ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২১, ০৪:৪২ পিএম

ঢাকা : করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে দেশে। এর মাঝেই শঙ্কা জাগাচ্ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেল্টা’। এবার নতুন শঙ্কা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। চিকিৎসা বিজ্ঞান যাকে অভিহিত করেছে ‘মিউকরমাইকোসিস’ নামে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে চিকিৎসা বিষয়ক গাইডলাইন তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এর চিকিৎসা সম্পর্কে অধিদপ্তর থেকে জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এর মাঝেই মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা নিচ্ছেন আরো কয়েকজন। জানা গেছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। ওষুধ সহজলভ্য করতে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, মিউকরমাইকোসিস আসে পরিবেশ থেকেই। একে সরাসরি রোধ করা যাবে না। এর কোনো টিকাও নেই। যেসব মানুষের রোগ প্রতিরোধশক্তি কম, তারা কিছু পরামর্শ মেনে চললে ঝুঁকি কমবে। তবে তাতে যে শতভাগ নিরাপদ থাকা যাবে, তা-ও নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নতুন নয়। এই সংক্রমণ আগেও দেখা গেছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহূত স্টেরয়েড মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। এতেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘মিউকরমাইকোসিস বিরল রোগ। চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। যেসব ওষুধ লাগে সেগুলো কীভাবে সহজলভ্য করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। দ্রুতই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেবো।’

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘পরার্মশক কমিটি কোভিড-১৯ চিকিৎসা গাইডলাইনে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রয়োজনীয় ওষুধের মজুত এবং স্টেরয়ডের যৌক্তিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে ভয়ের কারণ নেই। এটা আগে থেকেই ছিল। করোনা এটার শঙ্কা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে কিছু রোগী আগেও ধরা পড়েছে। এখনো পড়ছে। আমরা মিউকরমাইকোসিসে একজন রোগী হারিয়েছি। অন্যরা চিকিৎসাধীন এবং তাদের অবস্থা ভালো।’ তিনি বলেন, যেসব রোগী ডায়াবেটিস, ক্যানসারে আক্রান্ত (বিশেষ করে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত), যারা কেমো পাচ্ছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড পাচ্ছেন- এসব রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন বিষয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তর একটি ছোট গ্রুপ করে দিয়েছিল। তারা একটি খসড়া তৈরি করেছে। ওষুধের দাম কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সোর্স তো একটাই। শুধু একটা কোম্পানিই এ ওষুধ তৈরি করছে। তাই অন্য কোম্পানিকেও এ ওষুধ তৈরির জন্য বলা হয়েছে। তাতে দাম কমে আসবে। মুখে খাওয়ার ওষুধ যেটা কাজ করে মিউকরমাকোসিসে, সেটা নেই। ওষুধ কোম্পানিকে বলা হয়েছে তৈরি করার জন্য।’

ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতাও জরুরি উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল বায়োটেকনোলজি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মারুফুর রহমান অপু বলেন, সাধারণত ড্যাম্প বা শরীরের ভেজা অংশে এ ফাঙ্গাস সহজে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। তাই বারবার পরতে হলে কাপড়ের মাস্ক রোজ ধুয়ে পরতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড নেওয়া যাবে না একেবারেই।

ডা. মারুফুর রহমান বলেন, হাসপাতালগুলোতে সঠিকভাবে ডিজইনফেকশন মেইনটেইন করতে হবে। আইসিইউ বা অপারেশন কক্ষেও বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। যদিও আমাদের দেশে এখনো ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহার করা হচ্ছে না, তথাপি যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোকে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সঙ্গে যে পানি দেওয়া হয়, সেটাও শতভাগ বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি।

তিনি আরো বলেন, ‘মানুষকে বোঝাতে হবে, বোঝানোর জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে এর ওষুধের দাম কমানোর উদ্যোগও নিতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই