‘ফাহিম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারত’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৬, ১০:০১ এএম

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিরা এভাবে মারা গেলে অনেক সত্য অপ্রকাশিত থাকবে। হয়তো ফাহিম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, রাষ্ট্র আইন হাতে তুলে নিচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে গত বুধবার বিকেলে তার ভাড়া বাসায় কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় তিন দুর্বৃত্ত। পালানোর সময় স্থানীয়রা ধাওয়া করে ফাহিমকে আটক করে। ঘটনাস্থলের কাছে একটি চাপাতি পাওয়া যায়। গুরুতর আহত রিপন বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ প্রথম থেকে বলে আসছিল, ফাহিম নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযুবত তাহ্রীরের সদস্য। হত্যা মিশনে অংশ নিতে ঢাকা থেকে সঙ্গীদের সঙ্গে মাদারীপুর যান তিনি।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সারওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার রাত ২টার দিকে ফাহিমকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে বের হয় পুলিশের ২০ সদস্যের একটি দল। তারা সকাল ৭টার দিকে মিয়ারচরে পৌঁছলে ফাহিমের সহযোগীরা গুলি ছুড়তে শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এর মধ্যেই ফাহিম পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে পাটক্ষেতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং কনস্টেবল আলী হোসেন আহত হন। তাকে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও পরে পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, তিনটি গুলি ও ছয়টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাহিমকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

পুলিশ সুপার জানান, বন্দুকযুদ্ধের সময় পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তবে সহযোগীদের ছোড়া গুলি নাকি পুলিশের গুলিতে ফাহিমের মৃত্যু হয়, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অস্ত্রের ব্যালিস্টিক পরীক্ষার পর এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে। ফাহিমের সহযোগীরাও হিযবুত তাহরীরের সদস্য কি-না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, তারা সবাই একই চক্র, তারা কখনও হিযুবত নামে, কখনও জেএমবি আবার কখনও শিবির নামে নাশকতা চালায়।

হিযবুতের ‘সফট টার্গেট', দক্ষিণাঞ্চলে ১০ দিনে ১০ গুপ্তহত্যার মিশন। পুলিশ জানায়, হিযবুত তাহরীর নিজেদের অস্তিত্ব ও কার্যক্রম জানান দিতে ‘সফট টার্গেট’ মিশনে নেমেছে। অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই, যারা সমাজে শ্রদ্ধাভাজন, নিরীহ ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত, যাদের হত্যা করলে পাল্টা আক্রমণ করতে পারবে না- এমন নিরপরাধ মানুষ হত্যার টার্গেট করেছে তারা। বন্দুকযুদ্ধের আগে ফাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তার সহযোগী সালমান তাসকিন, শাহরিয়ার হাসান, জাহিন, রায়হান ও মেজবাহও দক্ষিণাঞ্চলে গুপ্তহত্যার মিশন নিয়ে এসেছিলেন। মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, হিযবুত তাহরীরের এই দলটি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আগামী ১০ দিনে অন্তত ১০টি গুপ্তহত্যার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী ছিলেন তাদের প্রথম টার্গেট।

পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্টদের দাবি, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য ছিলেন ফাহিম। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। মাদারীপুরের অভিযান সফল হওয়ার পরপরই তাদের বরিশালে একই ধরনের হামলা চালানোর কথা ছিল। তবে ফাহিম ধরা পড়ায় ও পুলিশের তৎপরতার কারণে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ফাহিমকে জঙ্গিবাদে প্ররোচিত করেন জুবায়ের আহমেদ নামের তার কলেজের এক বড় ভাই। শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টার নির্দেশও তিনিই দেন। কলেজের কাছে একটি লাইব্রেরির দুই কর্মীও এই চক্রে রয়েছেন। তারা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে এসএমএসের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। ফাহিম এই প্রথম কোনো অভিযানে গিয়েছিলেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সভাপতি সুলতানা কামাল গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘মানুষ বলছে, ক্রসফায়ার হওয়ার পর আপনারা কথা বলছেন কেন? যাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে, তারা অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তাদের মানবাধিকার নেই। এই যে একটা বোধ সমাজে চলে আসে, যেনতেনভাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে- এটা কোনো আধুনিক, গণতান্ত্রিক, সুশাসনসম্পন্ন রাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়।’ তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে একপর্যায়ে সমাজে হতাশা তৈরি হয়। এই হতাশা থেকে রাষ্ট্র নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ