জমকালো উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতুর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২২, ০৪:০৪ পিএম

ঢাকা : পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করে আয়োজনের ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।

এ সময় ব্যাপক জনসমাগম নিশ্চিত করতে চায় তারা। নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকেই দেশে-বিদেশে আলোচিত এই সেতু যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সেতু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ওইদিন জাজিরা প্রান্তের কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বিশাল শোডাউন করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এজন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে তারা। দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। গত ২৪ মে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

সেতু উদ্বোধনের সরকারি কর্মসূচি সফল করতে সরকারের সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৮টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সমাজের বিশিষ্টজন, ঢাকাস্থ বিভিন্ন মিশনের কূটনৈতিকদের আমন্ত্রণ দেওয়া হবে। বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে মঙ্গলবার সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই আলম চৌধুরী বলেন, সবে তো তারিখ ঘোষণা হলো। এখন সেতুর এপার-ওপারে কী কর্মসূচি থাকবে সেটা চূড়ান্ত করা হবে।  পার্টির সেক্রেটারি ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিশ্চয়ই আমাদের ডাকবেন। সেখানে যে সিদ্ধান্ত আসে সেই অনুযায়ী কর্মসূচি সফল করবো।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনী দিনে আমরা বিরাট সমাবেশ করতে চাই। ওইদিন আমরা বড় শোডাউন করে দেশ-বিদেশকে জানান দিতে চাই আমরাও পারি। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা পেরেছি নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করতে।

সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে আমন্ত্রণপত্র তৈরি, মঞ্চ প্রস্তুত এবং অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু উদ্বোধন করে গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যাবেন। সেখানে আরেক দফা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন। পরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উদ্বোধনের আগে তারা আরও কয়েক দফা পরিদর্শন করবেন।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জমকালো করতে সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৮টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত কমিটি দাওয়াত কার্ডের নকশা ও সজ্জার কাজ শুরু করে দিয়েছে। মনোরম ভেন্যু, সাজসজ্জা, আসন ব্যবস্থাপনা ও অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্য রয়েছে কমিটি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও প্রদর্শনী থাকবে। অতিথিদের দেওয়া হবে উপহার স্যুভেনির। এ জন্যও কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিথিদের মাওয়া ও জাজিরা দুই পাড়েই আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। আর এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দুই পাড়েই একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত থাকবেন।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা সরাসরি সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই সেতু চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু।

সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। এটি পদ্মা নদীর দুই পাড়কে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা দিয়ে সরাসরি যুক্ত করবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি মূল সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।

জানা গেছে, সরকার তার সফল প্রকল্পের সুফল ঘরে তুলতে চায়। পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এজেন্ডা করতে চায় সরকারি দল। যার কারণে সেতুর উদ্বোধনী দিনে শোডাউন করে সারাদেশে তাক লাগিয়ে দিতে চায় আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মত বিরাট অর্জনকে মানুষ যাতে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ না পায় সেজন্য বিভিন্ন মহলের জোরালো দাবি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের নামে এর নামকরণ চাননি। এ সংক্রান্ত সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নামকরণ চেয়ে মঙ্গলবার তার কাছে সামারি উপস্থাপন হলে তিনি তাতে স্বাক্ষর না করে বলেছেন পদ্মার নামেই সেতু নামকরণ হবে।

পদ্মা সেতুর আশপাশের জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে- সেতুর উদ্বোধনী দিনে বড় ধরনের শোডাউন করার আভাস তারা পেয়েছেন। তারিখ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে যে কোনও সময়ে তাদের প্রতি চূড়ান্ত নির্দেশনা আসতে পারে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে তাদের ঢাকায় ডেকে প্রস্তুতির বিষয়ে সার্বিক দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। তারা মনে করেন, পদ্মা সেতু সংলগ্ন ৫ জেলা ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার নেতাকর্মীদেরও উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য করতে তারা নিজেরাও উদ্যোগ নিচ্ছেন। তারা পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার নেতাদের ব্যাপক শোডাউনের নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি জেলা নেতাদের ঢাকায় ডেকে প্রস্তুতিমূলক সভা করবেন।

গত ২৪ মে মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণার সময় গণভবন গেটে ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, উদ্বোধন উপলক্ষে সাজসজ্জা করা হবে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে একটা সুধী সমাবেশ, আর জাজিরা প্রান্তে একটা জনসভা হবে।

বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যারা বেশি বিরুদ্ধে বলছে তাদের আগে আমন্ত্রণ দেবো।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, ওইদিন জনসভা হবে বলে আমরা জেনেছি। তবে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। আজই তো উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা হলো। নিশ্চয়ই আমাদের নির্দেশ দেওয়া হবে। আমরা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করতে চাই। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়ে জনসভায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবো।

সেতুর নির্মাণকাজ, রেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই অনুষ্ঠানগুলোর আগেও তাদের ঢাকায় ডেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এবারও নিশ্চয়ই তা হবে, আরও বড় আকারে হবে। ওইদিনের অনুষ্ঠান সফল করতে মাদারীপুর জেলা থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবিদুর রহমান খোকা শিকদার বলেন, জনসভাটি মাদারীপুর অংশে হলেও আমরা শরীয়তপুরের পক্ষ থেকে সেখানে উপস্থিত থাকবো। এরআগে গত ২৩ মে সোমবার রাতে আমরা পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের সঙ্গে কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী আমাদেরকে আগামী ৮ জুন ঢাকায় ডেকেছেন। সেখানে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নেবো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই